সাঈদীর প্রশংসা করলেন আওয়ামী লীগের এমপি

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি ছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করে দলটি। অথচ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রশংসা করলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম আনার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংসদ সদস্য আনার ছাড়াও তার ঘনিষ্ঠ সহচর ও কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি, ভাতিজা, সহকারী একান্ত সচিবও সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রকে বিষয়টি জানাব।

জানা গেছে, নিজ নির্বাচনী এলাকায় এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুর পর আনার বলেন, ‘একটা কথা বলি, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ’৭১ সালে সাঈদী ছিলেন না। এই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে। এখন যতই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হোক না কেন, আমরা তাকে সম্মান জানাই, তিনি বেশ সুরেলা ও ভালো বক্তা তাই না? উনি অনেক জ্ঞানী মানুষ।’

সংসদ সদস্যের বক্তব্যের এই অংশটুকু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ কারণে এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

এমপি আনার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এর আগে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বক্তব্যের বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য আনারের ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমানীর বিরুদ্ধেও সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পোস্ট দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও শিবলী নোমানী সাংবাদিকদের জানান, নেতাকর্মীরা যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সে জন্য সাঈদীর মৃত্যু যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই হয়েছে, তা জানাতেই তিনি এই পোস্ট দেন।

এ ছাড়া কালীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক স্বীকৃত ও চিহ্নিত রাজাকার মোমিন মৌলভির সন্তান কি না, সে প্রসঙ্গে শিবলী বলেন, তিনি ২৯ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি করেন।

এমপির মদদে শিবলী নোমানী সই জাল করে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা। যদিও শিবলী ঘটনা অস্বীকার করেছেন।

সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যের ভাই আবেদ আলীর ছেলে মেহেনাজ হোসাইন সাইমনও সাঈদীর মৃত্যুতে পোস্ট দেন। সেখানে সাইমন সাঈদীর ছবিসংবলিত ‘বিদায় রাহবার’ লেখা ছবি শেয়ার করে শোক প্রকাশ করেন। এ ছাড়া, সংসদ সদস্যের একান্ত সহকারী তরিকুল ইসলাম ‘মুসলিম বিশ্বের অন্যতম রাহবার পবিত্র আল কোরআনের পাখি’ লিখে সাঈদীর ছবি দিয়ে শোক প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। এটি আমাদের আদর্শবিরোধী। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত কঠোর। সে যেই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

Recommended For You