সরকারি গণগ্রন্থাগারের ২৮ হাজার বই নষ্ট

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বান্দরবান জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের প্রায় ২৮ হাজারের বেশি বই নষ্ট হয়ে গেছে। কাদাপানিতে নষ্ট হয়ে গেছে গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ৩৫ বছরের পুরোনো পত্রিকা।

জানা যায়, ১৯৮২ সালে কার্যক্রম শুরু হওয়া সরকারি গ্রন্থাগারটিতে ৩৪ হাজার বই তালিকাভুক্ত ছিল। ২০১০ সালে শহরের জজকোর্টের পাশে নিচু এলাকায় নিজস্ব নতুন ভবনে গ্রন্থাগারটি স্থানান্তরিত হয়। ২০১৯ সালে প্রথম বার বন্যার পানিতে সাড়ে ৩ হাজার বই নষ্ট হয়েছিল। এবারের দ্বিতীয় বন্যায় অবশিষ্ট ২৮ হাজারের বেশি বই অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সব বই বন্যার ময়লা পানি ও কাদামাটিতে একাকার হয়ে গেছে। পুরো গ্রন্থাগার জুড়ে কাদামাটিযুক্ত বই ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে ও জ্ঞান আহরণ করতে তৈরি করা কর্নার, চারপাশে বই রাখার রেক, চেয়ার-টেবিল এবং মূল্যবান নথিপত্র সব তছনছ হয়ে গেছে। কোনো বই আর অক্ষত নেই এখানে। মেঝেতে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাদা মাটি জমে আছে। বন্যার পানি যেন গণগ্রন্থাগারটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। টানা ভারী বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে জ্ঞানের ভাণ্ডার বান্দরবান সরকারি গণগ্রন্থাগার।

গ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা জানান, এই গ্রন্থাগারে তালিকাভুক্ত পাঠক রয়েছেন তিন শতাধিক। নিয়মিত পাঠক রয়েছেন প্রায় পঞ্চাশ থেকে সত্তর জন। তাদের মতে গণগ্রন্থাগার ভবনটি দোতলা বা তিনতলা হলে বইসহ সবকিছুই রক্ষা পেত। একতলা হওয়াতে কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তারা আরও জানান, নিচু হওয়ায় ২০১৯ সালের বন্যায় পানি ঢুকেছিল গ্রন্থাগারটিতে। তখন সাড়ে তিন ফুট পানি উঠার পরও সাড়ে তিন হাজার বই নষ্ট হয়েছিল। রক্ষা পেয়েছিল ২৮ হাজারেরও বেশি বই। এবারের বন্যায় পুরো একতলা ভবন আট-নয় ফুট পানির নিচে ছিল দুই দিন। ফলে গ্রন্থাগারের কোনো কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

জেলা গণগ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক মাশৈথুই চাক বলেন, গ্রন্থাগারের তালিকাভুক্ত ৩৪ হাজার বইয়ের কোনটিরই আর অবশিষ্ট নেই। মুক্তিযুদ্ধের দলিল, স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল, দুষ্প্রাপ্য বিশ্বকোষ, ব্রিটানিকা, বাংলাপিডিয়া, রবীন্দ্র রচনাবলি, নজরুল রচনাবলি, অনুবাদের বই, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, স্ক্যানার, ক্যামেরা, চেয়ার টেবিল, বই রাখার আসবাবপত্র, নথিপত্রগুলো সবই ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু বই নয়, পঁয়ত্রিশ বছরের বাইন্ডিং করা বিভিন্ন পত্রিকার কপিও সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। বইগুলো কাদামুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেগুলো শুকানোর পর সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের যানবাহনটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানেও পানি উঠে যাওয়ায় কাদাপানিতে গাড়ির বেশ কিছু অংশ ডুবে যানবাহটি বিকল হয়ে যায়। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিয়ান প্রতিনিধি খুরশিদুল হাসান বলেন, বন্যার পানিতে ডুবে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির দেড় হাজার বই নষ্ট হয়েছে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You