প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত করতে এবারো সবধরনের কারিগরি সহায়তা দেবে বুয়েট। সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই এবারের পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রিক নানা ধরনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর। শিগগিরই পরীক্ষা আয়োজনের দিনক্ষণও ঘোষণা করা হবে।
এ দিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের আগেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মাসে প্রথম ধাপে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। গত তিনটি নিয়োগের মতো এবারো পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় থাকবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের মাধ্যমে আগের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, ঝুঁকিও ছিল না। এ ছাড়া দ্রুত সময়ে পরীক্ষা নিয়ে নির্ভুলভাবে ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হয়। তাই এবারো বুয়েটের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বুয়েটের সাথে বৈঠক করার পর গত রোববার এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য বুয়েটের অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি নিষ্পত্তি হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরেই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করতে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা হয়। পরীক্ষার তারিখ ঠিক করতে শিগগির একটি সভা ডাকা হবে। সেখানে তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো: ফরিদ আহাম্মদ জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে কমপক্ষে প্রথম ধাপ এমসিকিউ পরীক্ষা শেষ করতে চাই। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বুয়েটসহ অন্যদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়া গেছে। এখন সবার সাথে আলোচনা করেই পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য সহকারী শিক্ষকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন জমা পড়ে তিন লাখ ৬০ হাজার ৭০০টি। দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মার্চ ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে আবেদন জমা পড়ে চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৮টি। গত ১৮ জুন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ ধাপে আবেদন জমা পড়েছে তিন লাখ ৪০ হাজারের কিছু বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ ১৩ হাজার সহকারী শিক্ষক রয়েছেন।
প্রতি বছর প্রায় ছয় হাজারের কাছাকাছি শিক্ষক অবসরে যান। ২০২২ সালে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগ দেয়ার পর গত বছর ডিসেম্বর পযন্ত আট হাজারের বেশি পদ শূন্য হয়। এসব শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিভাগভিত্তিক পৃথক তিনটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চূড়ান্ত নিয়োগের আগে যত পদ শূন্য হবে সেই সংখ্যক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। কারণ একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যায়। তাই একটি নিয়োগ চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত যত শূন্য পদ আছে সে পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়া হবে। এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি দিতে দুই বছর সময় লেগেছে। বিভাগ ভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারলে ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ দেয়া যাবে বলেও মনে করছে মন্ত্রণালয়।