২০ কোটি টাকার জমি ৫ কোটিতে বিক্রির অভিযোগ

ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্র্যাক ব্যাংক নিলামে সাড়ে ৭২ শতাংশ জমি ক্রেতার সঙ্গে ‘আঁতাত’ করে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মো. ইদ্রিসুর রহমান মধু নামে এক ব্যবসায়ী। ইদ্রিসুর রহমান মধু কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ এলাকার শিল্পী ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার দাবি, ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক্রেতার সঙ্গে আঁতাত করে তার জমি চার ভাগের এক ভাগ দামে বিক্রি করেছে। এতে তিনি চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রোববার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইদ্রিসুর রহমান জানান, ২০১৬ সালের মে মাসে ব্র্যাক ব্যাংক, পান্থপথ শাখা থেকে সাড়ে ৮ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। পরে পর্যায়ক্রমে আরও সাড়ে ৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। এতে তার মোট ১৩ কোটি টাকা ঋণ দাঁড়ায়। বিভিন্ন সময়ে তিনি ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। করোনায় তার ব্যবসায়ে লোকসান হয়। এতে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন তিনি।

তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক আমার বন্ধককৃত জমি নিলামে ওঠায় এবং বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়। চলমান প্রক্রিয়ায় টাকার পরিমাণ সুদে-আসলে বেড়ে ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৬২ টাকাতে দাঁড়ায়। এ টাকা দাবি করে অর্থঋণ আদালত-২-এ মামলা করে ব্র্যাক ব্যাংক। মামলা চলমান অবস্থায় পুনরায় বন্ধককৃত জমি নিলামের আবেদন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ এপ্রিল পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই নিলামের তারিখ ছিল ২১ মে।

নিলাম চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ১৫ মে ইদ্রিসুর রহমান মধু রিট করেন। হাইকোর্ট তাকে তিন মাসের মধ্যে দুই কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন এবং নিলাম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন জানিয়ে এ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, অথচ মাত্র তিনদিনের মাথায় হাইকোর্টের অর্ডার স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে যায় ব্র্যাক ব্যাংক। ১৮ মে আদালত হাইকোর্টে আমার পক্ষে দেয়া আদেশ স্থগিত করেন। ২১ মে জমি নিলাম করে। সেখানে প্রায় ২০ কোটি টাকা দামের জমি (কেরানীগঞ্জের জিয়া নগর মালঞ্চ মৌজা) ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। ক্রেতার সঙ্গে আঁতাত করে এমন কম দামে জমি বিক্রি করেছে ব্যাংক। এতে আমি চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।

নিলামের আগে তিনি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজে জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জানিয়ে ইদ্রিসুর রহমান মধু বলেন, এ নিয়ে কথা বলতে ব্যাংকে গেলে আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ব্র্যাক ব্যাংকের নিলাম সংশ্লিষ্ট ও রিকভারি টিমের অফিসার কোটি টাকার বিনিময়ে আমার ২০ কোটি টাকার জমি ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। আমার মতো ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসায়ীকে বাঁচানোর পরিবর্তে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমির ব্যবসায় জড়িয়ে পথে বসানোর ব্যবস্থা করেছে। আমি এখন নিঃস্ব। সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাই।

ব্যবসায়ীর অভিযোগ বিষয়ে জানতে ব্র্যাক ব্যাংকের পান্থপথ শাখা ব্যবস্থাপকের অফিসিয়াল নম্বরে কল দেওয়া হয়। কল রিসিভের পর নাম-পরিচয় না জানিয়ে ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আদালতের নির্দেশনা ও নিলামের সব নিয়ম মেনে জমি বিক্রি করা হয়েছে। ব্যাংকের কেউ নিলাম প্রভাবিত বা আঁতাত করার প্রশ্নই আসে না। যদি তার কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য থাকে, তাহলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

শেয়ার করুন:

Recommended For You