‘আমরা এখন গেম ঘরে আছি, আগামী বুধবারে ডেঙ্গিতে তুলবে’, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয় রবিউল। এর পর থেকে আর রবিউলের সাথে যোগাযোগ নেই তার পরিবারের। শুক্রবার সন্ধ্যায় কান্না জড়িত কণ্ঠে রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার একথা জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আজ থেকে ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সাথে কথা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছেন, আমার জন্য দোয়া করো। । তারপর থেকে আর কোন যোগাযোগ করতে পারেনি।’
দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার সময় এভাবেই নিখোঁজ হয় রবিউলসহ নরসিংদীর আরও ৮ যুবক। তারা প্রত্যেকেই বেলাব উপজেলার বাসিন্দা।
নিখোঁজ যুবকেরা হলেন, বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০) ও মৃত হাছেন আলীর ছেলে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের চর গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশীদ রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২) ও আঃ মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩) রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০) ও নিলক্ষিয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১), দেওয়ানচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।
এরা প্রত্যেকেই একটি সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে এই ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাড়ি জমায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজ তারা নিখোঁজ। আর ওদের অসহায় পরিবারের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি । দুলাল কান্দি গ্রামের লাল মিয়া ছেলে জাকিন হোসেন এবং নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুর (জাকিরের ফুফু) নামে দুই দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ে ওরা।
নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম ভাইয়ের সন্ধান চেয়ে বলেন, ‘আমার ভাই আট মাস আগে লিবিয়া গিয়েছিল ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে। কিন্তু সেখানে ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেয়নি। দুলালকান্দির দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আমার ভাই নিখোঁজ।’
নিখোঁজ কামাল মিয়ার ছোট ভাই জামাল মিয়া জানান, ‘৫-৬ মাস আগে আমার ভাইকে ১২ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ইতালির উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন গেমঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮ ঘটিকায় ডেঙ্গিকে তুলে ইতালির পথে যাত্রা করে। কিন্তু ৪০ মিনিট পর ডেঙ্গি ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে ২০ জন থেকে ১১ জন ফিরে আসলেও ৯ জন নিখোঁজ রয়ে যায়। এ তথ্য দালাল জাকির হোসেন স্থানীয় মিলন মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের জানায়। এর মধ্যে আমার ভাইও নিখোঁজ।’
এ বিষয়ে দুলালকান্দি গ্রামের বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মেম্বার জানান, ‘আমি খবর পেয়ে জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ফোন দিলে মোবাইল অন্য একজন রিসিভ করে আমাকে জানান, জাকির হোসেনের আন্ডারে ২০ জনের থেকে ১১ জন উদ্ধার হলেও ৯ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
দালালদে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ি তালাবদ্ধ। লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই জাকির হোসেন ও শাহিনুর গা ডাকা দিয়েছে।
বেলাব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘লোক মুখে শুনেছি। এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, ‘নিখোঁজের সংবাদ লোক মুখে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন যোগাযোগ করা হয়নি। নিখোঁজের বিষয় জানতে প্রবাসী ও বৈদেশি কর্মসংস্থানে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’