
বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের শততম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯২৪ সালের এইদিনে তিনি নড়াইলের মাছিমদিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. মেছের আলি, মাতা মোছা. মাজু বিবি। চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে পিতা মাতা আদর করে নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া।
এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, সুলতানের জন্ম বার্ষিকী পালনে সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সুলতান কমপ্লেক্সে শিল্পীর সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
অপরদিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা হাতে নিয়েছে। সুলতান কমপ্লেক্স ও জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শিল্পীর সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, শিল্পীর কর্মের উপর ১শ ফুট লম্বা শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টক্যাম্প, শিশু চিত্রকর্মশালা, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, শিশুদের নিয়ে নৌকা ভ্রমণ, শিল্পী এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের পর্যালোচনা, আলোচনা সভা ও শিল্পীর জীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শনী।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খানসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীরা শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান এস এম সুলতান সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী।
১০ আগস্ট তৎকালীন মহকুমা শহর নড়াইলের চিত্রা নদীর পাশে সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা, পাখির কলকাকলীতে ভরা মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শিল্পী এস এম সুলতান। চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৭০ বছরের বোহেমিয়ান জীবনে তিনি তুলির আঁচড়ে দেশ, মাটি, মাটির গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতী মানুষের সাথে নিজেকে একাকার করে সৃষ্টি করেছেন- ‘পাট কাটা’, ‘ধানকাটা’, ‘ধান ঝাড়া, ‘জলকে চলা’, ‘চর দখল’, ‘গ্রামের খাল’, ‘মৎস্য শিকার’, ‘গ্রামের দুপুর’, ‘নদী পারা পার’, ‘ধান মাড়াই’, ‘জমি কর্ষণে যাত্রা’, ‘মাছ ধরা’, ‘নদীর ঘাটে’, ‘ধান ভানা’, ‘গুন টানা’, ‘ফসল কাটার ক্ষণে’ , ‘শরতের গ্রামীণ জীবন’, ‘শাপলা তোলার মত বিখ্যাত সব ছবি। ১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পলক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশিয়ান শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।
১৯৭৬ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মূলত এ প্রদশর্নীর মাধ্যমে এ দেশের সুশীল সমাজের কাছে তার নতুনভাবে পরিচয় ঘটে।
কালোত্তীর্ণ এ চিত্রশিল্পী ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্ষ্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল শিশুদের নিয়ে। নিজের সঞ্চিত অর্থে শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় চিত্রা নদীর পাড়ে নিজ বাড়িতে শিশুস্বর্গ নির্মাণ করেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল- নৈৗকায় করে কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে নিয়ে প্রকৃতি দেখবেন। শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হবে। প্রকৃতির ছবি আঁকবে। কিন্তু তার সেই সাধ পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শিল্পী সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।