লক্ষ্মীপুরে ২ হাজার হেক্টর আমন-সবজিক্ষেত পানির নিচে

লক্ষ্মীপুরে টানা ৩ দিনের বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর আমন ধান ও শাক-সবজির ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার অন্তত ৩৫টি গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক ভেঙে গেছে।

এরমধ্যে রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরবংশী কমলনগর চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জে একটি রাস্তা ভেঙে জনপদে পানি ঢুকেছে। এতে ১৫ বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। রামগতির চর রমিজ ও চর আবদুল্লাহসহ বিভিন্নস্থানে আরও ৩৫টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর ৮১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। খরার কারণে কৃষকরা পুরোদমে আবাদ করতে পারেননি। এ মাসজুড়ে তারা আবাদ করার আশা করেছিলেন। এদিকে জোয়ারের পানিতে ১ হাজার হেক্টর জমির আমন ও ৬০ হেক্টর জমির সবজি তলিয়ে গেছে। তবে বেসরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২ হাজার হেক্টর আমন ও শাক-সবজির ক্ষেত ডুবে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ৩ দিনের বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে রামগতি ও কমলনগরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। এ জনপদের ৩২ কিলোমিটার উপকূলে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে আশপাশের বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘর ডুবে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার ২৫টি গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক ভেঙে গেছে। এসময় অন্তত ৫০টি বসতঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

রামগতির চর রমিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম দিদার বলেন, জোয়ারের কারণে ২টি পাকা ও ৪টি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। ৩দিন ধরে মানুষ দুপুর এবং রাতে চুলোতে আগুন দিতে পারেনি। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে কষ্টের শেষ নেই।

টানা বর্ষণে রায়পুরে ৫০ হেক্টর কৃষি জমি পানির নিচে চলে গেছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রায়পুর উপজেলার আমন ধানের জমি তলিয়ে রয়েছে। কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৫০ হেক্টর কৃষি জমি (আমন ধান ও সবজি ক্ষেত) পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

বুধবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আটদিনের বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে রায়পুরের উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চর-আবাবিল ও দক্ষিন চর-আবাবিল ইউনিয়নের ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে গেছে। মেঘনা উপকূলে বেঁড়িবাধ থাকালেও জোয়ারে নদী তীরবর্তী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, টানা ভারী বৃষ্টিতে রায়পুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এতে উপজেলার চারটি নিচু অঞ্চলের সব আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা ৪-৫ দিন পানিতে ডুবে থাকায় মধ্য বয়স্ক আমনের চারা গাছ পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যার মধ্যে তুলনামূলক উঁচু অঞ্চলের আমন ক্ষেতের চারা গাছ দেখা গেলেও নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ ধান ক্ষেত এখনও পানিতে ডুবে রয়েছে। এভাবে টানা দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকলে বাকি আমন ক্ষেত পচে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় উপজেলার চাষিরা।

উত্তর চর-আবাবিল গ্রামের কৃষক মরন গাজী বলেন, অনেক টাকা খরচ করে ক্ষেতে আমন ধান রোপন করেছিলাম। এখন ওই জমি পানিতে ডুবে সব গাছ পচে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানাসহ আবর্জনা জমিতে জমা হচ্ছে।

রায়পুর উপজেলা কৃষি অফিসার তহমিনা খাতুন বলেন, চলতি বছর ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে ১৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। তবে খরার কারণে কৃষকরা পুরোদমে আবাদ করতে পারেননি। এ মাসজুড়ে তারা আবাদ করবেন। তবে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ৩০ হেক্টর জমির আমন ও ২০ হেক্টর জমির সবজি তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে রোপা আমন ৩০ হেক্টর ও বীজতলার ২০ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ৪০ হেক্টর জমির শাকসবজি পানিতে ডুবে আছে। পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। অনেক স্থানে আমনের জমি ডুবে আছে। যার মধ্যে কিছু বেঁচে যাবে এবং কিছু পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

রামগতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, রামগতিতে বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টরের রোপা আমন ও ২৪৭ হেক্টর জমির বীজতলার আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ১০৫ হেক্টর জমির শাকসবজি পানিতে ডুবে আছে। পানি সরলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হবে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, কমলনগরে ৭-৮টি গ্রামীণ রাস্তা ভেঙে গেছে। এরমধ্যে চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ এলাকার একটি রাস্তা ভেঙে জনপদে পানি ঢুকেছে। এতে ১৫-২০টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমির আমন ফসল ও সবজি নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়সহ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমনের চারা রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, জোয়ারে গ্রামীণ সড়ক ও ঘরবাড়ি ক্ষতির বিষয়ে ইউএনওরা কাজ করছেন। প্লাবিত হওয়া এলাকার দুইটি আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির যে তালিকা পাওয়া গেছে, তা ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। নাসিরগঞ্জের ভাঙ্গনের বিষয়টি অবগত হয়েছি। সংশ্লিষ্টদের বলেছি বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।

Recommended For You