
আজ ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
এই দিনে আদিবাসী সংগঠনগুলি ও আদিবাসীরা একত্রিত হয়ে তাদের বিভিন্ন দাবিনামা পেশ করে থাকেন অধিকার আদায়ে। দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হল আদিবাসীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি, শিক্ষা প্রভৃতি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা বা সচেতন করে তোলা।
দিবসটি উপলক্ষে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলের আদিবাসী মুন্ডা সংস্থা সামস বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সামসের নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুন্ডা জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনাসভা, যুব আদিবাসীদের নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা,আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।
সুন্দরবন উপকূলের আদিবাসী মুন্ডারা কেমন আছেন এ বিষয়ে কৃষ্ণ পদ মুন্ডা জানান, সুন্দরবন উপকূলের মুন্ডা, রাজ বংশী, মাহাতো, বাগদি, বুনো, উঁরাও সম্প্রদায় বাস করেন। যাদের কথা অনেকেই ভুলে গেছেন।
বাংলাদেশের আদিবাসীদের দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক পার্বত্য অঞ্চল বা পাহাড়ী অঞ্চল, দুই সমতল অঞ্চল। অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসীদের খোঁজ রাখলেও সুন্দরবন অঞ্চলের আদিবাসীদের কেউ খোঁজ রাখেন না বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, সাভার, গাজীপুর, সিলেট, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ অন্যান্য অঞ্চলে মুন্ডারা বাস করেন। তারা যেখানে থাকুক তাদের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের আচার আচারণ আলাদা।
কৃষ্ণ পদ মুন্ডা বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলের মুন্ডাদের নিয়ে এখনও গবেষণা হয়নি। তাদের নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। সুন্দরবন অঞ্চলের মুন্ডাদের ধর্ম গ্রন্থ নেই। তারা প্রকৃতি পুজারী। তবে কারো কারো মতে তাদের দেবতা হল বিরসা মুন্ডা। যিনি ১৮৭৫ সালে ভারতের রাঁচি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তারা পূর্ব পুরুষের স্মরণ করে পূজা করেন। আদিবাসী মুন্ডাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বুনো, কুলি নামে ডাকত বা ডাকেন। মুন্ডা সম্প্রদায় ইদুর, শামুক, শুকর ইত্যাদি খায় বলে তাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না। এমনকি বাঙালি ছেলে-মেয়েরা মুন্ডা ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশতে চায় না এ সকল খাওয়ার কারণে।
মুন্ডা শব্দটি নিয়ে জানতে চাইলে মুন্ডা শব্দের অর্থ নিয়ে ভিন্ন মত পাওয়া যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের মতে মুন্ডা শব্দটি ‘মুড়হা’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে মুন্ডা ভাষায় মুড়হা বলতে গাছের শিকড়কে বুঝানো হয়েছে। অনেকে বলেন মুড় থেকে মুন্ডা শব্দটি এসেছে। মুন্ডাদের শারীরিক রং কালো, উচ্চতা মাঝারাী, কোকড়ানো চুল, মাথার খুলি দীর্ঘ আকৃতির, নাক চেপ্টা। তবে মুন্ডাদের আকৃতিতে ভিন্নতা থাকতে পারে।
এ অঞ্চলে মুন্ডাদের বসবাস সম্পর্কে বয়স্ক ব্যক্তি অশ্বিনী মুন্ডা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা ভারতের রাঁচি শহর, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, বিহার এলাকা থেকে সুন্দরবন অঞ্চলে এসেছেন। তৎকালিন জমিদাররা সুন্দরবন আবাদ করাসহ তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করার জন্য নিয়ে আসেন বলে জানান তিনি।
বর্তমান সময়ে মুন্ডাদের নানান সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন অশ্বিনী মুন্ডা। তাদের সুপেয় পানির সমস্যা, জমি রক্ষার লড়াই, কর্মক্ষেত্র কমে যাওয়া, ভাষা সংস্কৃতির লড়াইসহ অন্যান্য সমস্যা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য অর্থনৈতিক উন্নতি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করার প্রয়োজন বলে দাবি মুন্ডাদের।