ফেনীর পরশুরাম উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শত বছরের পুরানো পরশুরাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। রোববার সকাল থেকে এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই ছবি ভাইরাল হয়েছে। টিনের চাল ফুটো থাকায় বৃষ্টির পানি পড়ছে শ্রেণিকক্ষে। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে অনেকটা বাধ্য হয়েই ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
যেসব শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ছাতা নিয়ে আসেনি তাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর বই, খাতা ও স্কুল ব্যাগ বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। উপজেলার অন্যতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন দুরাবস্থা দেখে অনেক স্কুলে আসতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুলে একটি নতুন ভবন রয়েছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পুরাতন আধা পাকা টিনসেডের কক্ষে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। ওই ভবনে টিনের চাল ফুটো থাকায় সরাসরি বৃষ্টির পানি পড়ছে শ্রেণিকক্ষে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই শ্রেণিকক্ষের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করছে।
পরশুরাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি মো. মামুনুর রশিদ জানান বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নেই। নতুন একটি ভবন থাকলেও ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। নিচ তলায় শুধুমাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বাধ্য হয়েই পুরাতন টিনসেডের কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই জরাজীর্ণ টিনসেডের বিল্ডিং পাঠদান করাতে হচ্ছে। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে পাঠদান কার্যক্রম চললেও বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা ছাতা মাতায় দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পেয়ার আহাম্মদ বাবুল বলেন, ক্লাস রুমে পানি পড়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে রাজি হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিষয়টি ইতোপূর্বে একাধিকবার ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতারের কাছে আাবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ভবন মেরামতের জন্য কোন বরাদ্দ দেননি। স্কুলটির অধিকাংশ ক্লাসরুমের অবস্থায় খুবই জরাজীর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই চালের পানি গড়িয়ে ভেতরে পড়ে। বৃষ্টি একটু বেশি হলেই শিক্ষার্থীদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে বসতে হয়।
স্কুলের ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, তাদের স্কুলের চালের অবস্থা খুব খারাপ, সিলিংও ভাঙা। একটু বৃষ্টি হলেই তাদের ক্লাসরুমের ভেতরে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে শুরু করে। মেঝেতে পানি জমে যায়। একই কথা বলেন স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র। তারা বলেন, ক্লাসের অবস্থা খুবই খারাপ। অকেজো ভবনেও আমাদের ক্লাস হচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হলে চালের ফুটা দিয়ে পানি ঘরের ভেতরে পড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে শেণিকক্ষের ভেতরেই আমাদের ছাতা কিংবা পলিথিন মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে এইভাবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
পরশুরাম সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান চৌধুরী আসিফ বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়, স্কুলের ভবনগুলি এতই জরাজীর্ণ যে শিক্ষার্থীরা ঝুকিপূর্ণভাবে ক্লাস করছেন। তাছাড়া বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ছাতা মাতায় দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, পুরাতন টিনসেডটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনো সাড়া পাইনি। তাই এই বৃষ্টির মধ্যে বাধ্য হয়েই পুরাতন টিনসেডে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বই খাতাসহ পোশাক ভিজে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে এসে ক্লাস করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো সফিউল আলম তালুকদার বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস চলছে। নতুন ভবন হলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা শসসাদ বেগম বলেন, ছবিটি আপনার মাধ্যমে দেখেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সরেজমিন দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।