ফেনীর আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা এবারের দাখিল পরীক্ষায় ভালো ফল হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর দাখিল-আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে শীর্ষস্থানে থাকলেও এবার দাখিলে গড়েছে ফেলের রেকর্ড। ফলে মাদরাসা বোর্ডে শীর্ষ ১০-এ স্থান পাওয়া তো দূরের কথা, এবার জেলাতেও পিছিয়ে পড়েছে পাশের হারে।
ফলাফল বিবরণীতে জানা গেছে, ২০২৩ সালের পরীক্ষায় ২৬৯ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২২৬ জন। এদের মধ্যে সাধারণ বিভাগে ১২০ জন ও বিজ্ঞান বিভাগের ১০৬ জন পাশ করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৫ জন। পাশের হার ৮৪ দশমিক ৯৬শতাংশ।
এর আগের বছর ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক জিপিএ ৫ ও পাসের হারে জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালযের অধিভুক্ত এ প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে সর্বাধিক ২শ ৪৮ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পায় ১শ ১৭ জন। পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ১৭।
এদিকে ফলাফল বিপর্যয় নিয়ে চাপে পড়েছেন গভর্নিং বডি ও শিক্ষকরা। ফল ঘোষণার দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। সমালোচকরা ফল বিপর্যয়ের জন্য মাদরাসায় শিক্ষার পরিবেশকে দায়ী করছেন।
তাদের মতে, বহিরাগতদের নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর উশৃঙ্খল আচরণে পড়াশোনার পরিবেশ ব্যাহত হয়। একপর্যায়ে মাদরাসার ছাত্রাবাসটি পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। নানা অজুহাতে শ্রেণিকক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মারধর এমনকি শিক্ষকদের নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। এসব কারণে শিক্ষকরা যেমন শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠ আদায় ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি অন্যদিকে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও প্রতিষ্ঠান থেকে সরে পড়ে। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি পড়াশোনার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এজন্য অনেকেই গভর্নিং বডিকেও দুষছেন।
তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে গভর্নিং বডি। অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গভর্নিং বডির সভাপতি ও পৌরসভার কাউন্সিলর হারুন উর রশিদ মজুমদার। তিনি বলেন, শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছেন বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজী হননি অধ্যক্ষ মুফতি ফারুক আহমাদ। তবে শিক্ষকদের অনেকে নজিরবিহীন এ ফল বিপর্যয়ের জন্য পরিবেশকেই দায়ী করেন। তারা বলেন, এসব বিষয়ে গভর্নিং বডিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানে জানিয়েও কার্যকর ফল মিলেনি। এতে করে কিছু অছাত্রের সহযোগিতায় কতিপয় নামধারী শিক্ষার্থী উশৃঙ্খল আচরণের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
উপাধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ফলাফল বিপর্যয় যা হয়েছে, তা আমাদের ক্যালকুলেশন ছিল কিছু খারাপ হতে পারে। কারণ শিক্ষার্থীরা কথা না শুনলে তার ব্যাড ইফেক্ট কিছু হবে। আমরা আবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।’
অন্য এক শিক্ষক জানান, গত ২০ বছরের ফেল যোগ করলে এবারের একবছরে ফেলের চেয়ে কম হবে। তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।