ভারতীয় সংগীত জগতে এ আর রহমানের তুলনা তিনি নিজেই। কিংবদন্তি এই শিল্পীকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন মানুষ বরাবরই। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে তিনি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছেন। নব্বই দশকের শুরুতেই রহমান এবং তার পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে এ আর রহমানের নাম ছিল দিলীপ কুমার। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন তিনি। তার বাবা সংগীত পরিচালক আর কে শেখরের মৃত্যুর কয়েক বছর পর ইসলাম গ্রহণ করেন দিলীপ। তখনই নিজের নাম বদলে ‘আল্লারাখা রহমান’ রাখেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্ম বদলের বিষয়ে এ আর রহমান বলেন, ‘ইসলাম আমাকে মানসিক শান্তি দেয়। কেউ আমাকে এ পথে আসতে বলেনি। আমি অনেক শান্তি পেতাম। মনে হচ্ছিল, সবই ঠিক চলছে। মনের ভেতর বিশেষ কিছু অনুভূতি কাজ করত। যে জিঙ্গেলগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, প্রার্থনার পর সেগুলো কবুল হতে থাকল।’
তাহলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরই কি জীবনে সফলতা এসেছে— এমন প্রশ্ন অনেকেই করেন এ আর রহমানকে। উত্তরে এই সংগীতজ্ঞ বলেন, ‘এটা ইসলামে ধর্মান্তরের বিষয় নয়। এটি আসলে সেই কেন্দ্রটি খুঁজে পাওয়া এবং নিজের ভেতর থেকে তাগিদ অনুভব করা। এ ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক ও সুফি গুরুদের শিক্ষা এবং আমার মায়ের ভাবনাচিন্তাও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। প্রত্যেক বিশ্বাসেই বিশেষ কিছু রয়েছে এবং আমরা একটি বিশ্বাস বেছে নিয়েছি মাত্র। এবং আমরা এর পক্ষে।’
তবে নিজে ইসলাম গ্রহণ করলেও, পরিবারের কারও ওপর তা জোর করে চাপিয়ে দেননি। রহমানের কথায়, ‘আপনি কারও ওপর কিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে পারেন না। আপনি কি সন্তানকে বলতে পারেন— ইতিহাস পড়ো না, সেটা বোরিং কিংবা অর্থনীতি বা বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে হবে? এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তেমন ধর্মও।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রার্থনা খুব উপকারী। অসংখ্য পতন থেকে এটি আমাকে রক্ষা করেছে। প্রার্থনার মাঝে মনে হয়, ওহ, আমাকে প্রার্থনা করতে হবে। তাই আমি খারাপ কাজ করতে পারব না। অন্য ধর্মবিশ্বাসীরাও একই কাজ করেন এবং তারাও শান্তিকামী। আমি এভাবেই ভাবি।’
এ আর রহমান আরও বলেন, ‘এটা ইসলামে ধর্মান্তরের বিষয় নয়। এটি মূলত সেই কেন্দ্রটি খুঁজে পাওয়া। নিজের ভেতরে তাগিদ অনুভব করা। এ ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক ও সুফি গুরুদের শিক্ষা ভূমিকা রেখেছে। আমার মায়ের চিন্তাও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। প্রত্যেক বিশ্বাসেই বিশেষ কিছু আছে। আমরা একটি বিশ্বাস বেছে নিয়েছি মাত্র। আমরা এর পক্ষে।’
এই সংগীতজ্ঞ আরও বলেন, ‘প্রার্থনা বেশ উপকারী। অনেক পতন থেকে এটি আমাকে রক্ষা করেছে। প্রার্থনার মধ্যে মনে হয়—আমাকে প্রার্থনা করতে হবে, তাই খারাপ কাজ করতে পারব না। অন্য ধর্মবিশ্বাসীরাও একই কাজ করেন। তারাও শান্তিকামী। আমি এভাবেই ভাবি।’
১৯৯২ সালে মণিরত্নম পরিচালিত একটি কফির বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। এরপরই তিনি মণিরত্নমের তামিল সিনেমা ‘রোজা’ ছবিতে প্রথম সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ পান। পারিশ্রমিক পান ২৫ হাজার রূপি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ৪টি জাতীয় পুরস্কার, ১৫টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন এ আর রহমান। সে বছর ১৩৮টি নমিনেশনের মধ্যে ১১৭টিতেই পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন রহমান। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তিনিই প্রথম একই বছর দু’টি অস্কার জিতেছিলেন। এ আর রহমানের নামে কানাডার মরখমে একটি রাস্তাও রয়েছে।