ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ককটেলসহ আটক ২

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশ থেকে দুই ব্যক্তিকে ককটেলসহ আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- হালিম রাজ ও আব্দুল হালিম।

পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে দফায় দফায়।

আটকৃতরা দাবি করছেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান ও কবিতার সিডি এবং পেনড্রাইভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাতে না পেরে ওই দুই ব্যক্তি গতকাল রবিবার বিকালে গায়ে আগুন দেয়াসহ ককটেল সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটান। ঘটনার পরপর হালিম রাজ ও আব্দুল হালিম নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

এ ঘটনার পর পুলিশের রমনা জোনের উপকমশিনার আশরাফ হোসেন ও ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় বৈঠক করেছেন। পুলিশ ও গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে আটককৃতদের সঙ্গে আর কারা আছে এবং কেন তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন।

এদিকে আটকৃতরা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজের লেখা গান ও কবিতার সিডি এবং পেনড্রাইভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাতে চেয়েছিলেন। এ কাজের জন্য ধানমন্ডি-৩২ নম্বর জাদুঘরের আবুল কাশেম ওরফে কিশোর নামের একজন কর্মকর্তাকে তারা ৩৫ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। তবে টাকা নেয়ার এক বছর পার হলেও লেখা গান ও কবিতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে পারেনি তারা। পরে অভিমানে ও ক্ষোভে হালিম রাজ ও আব্দুল হালিম নিজেদের গায়ে আগুন দেন ও ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ককটেল সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটান। একটি ককটেল সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হালিম রাজ ও আব্দুল হালিমকে আটক করে।

রবিবার রাতে ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পারভেজ ইসলাম জানান, আটক হালিম রাজের বাড়ি ময়মনসিংহে। তৃতীয় শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা ও গান লিখতেন। তার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল নিজের লেখা গান-কবিতা প্রধানমন্ত্রীকে পাঠাবেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন লোকের শরণাপন্ন হন। ধানমন্ডি-৩২ নম্বর জাদুঘরের আবুল কাশেম ওরফে কিশোর নামের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয় রাজের। কিশোর ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন গান-কবিতা পাঠানোর জন্য। কিন্তু ৩৫ হাজার টাকা দেন রাজ। এক বছর পার হলেও রাজের লেখা গান-কবিতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে না পৌঁছায় রাগে-ক্ষোভে নিজের গায়ে আগুন দেন ও ককটেল সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটান।

ওসি আরো বলেন, বোমাসদৃশ বস্তু বানাতে তারা অনেকগুলো দিয়াশলাইয়ের বারুদ একসঙ্গে করেন। ৮-১০টা বানিয়ে রাজ ধানমন্ডি-৩২ এ যান। একটির বিস্ফোরণ হলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ হালিম রাজসহ দুজনকে আটক করে। তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্র বলছে ককটেল সদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে ১৭টি।

এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পর জাদুঘরের কর্মকর্তা কিশোরকেও জিঙ্গাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে আটককৃতদের সম্পর্ক কী ও তার সঙ্গে কী ধরণের লেনদেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিশোরের বক্তব্য নিয়েছেন পুলিশ ও গেয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ধানমন্ডি থানার পুলিশ বলছে, আটককৃতদের রিমান্ডে এনে জিঙ্গাসাবাদ করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার ঠিকানার খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আটককৃতদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন ব্যক্তি একটি ব্যাগ থেকে বোমা সদৃশ মালার মতো একটি বস্তু গলায় ঝুলান। তারপর ওই ব্যাগ থেকে একটি বোতল বের করে তা থেকে কিছু নিজের গায়ে ঢেলে লাইটার বের করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অপর ব্যক্তি একটি ব্যানার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেন।

ব্যানারে লেখা ছিল ‘কোথায় প্রিয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী লক্ষ কোটি সমস্যা ও সমস্যার সমাধান জানি গুজব নয় বাস্তব বলছি, লক্ষ কোটি গোপালের এক গোপাল আমি অভিনেতা হালিম রাজ সোনার বাংলা ও সোনার বাংলার মানুষ ঠিক করার মেশিন, কালো কয়লায় খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত করতে পারি।’

শেয়ার করুন:

Recommended For You