নিজের যা করতে ভালো লাগে তাকেই যদি পেশা হিসেবে নেয়া যায়, তাহলে সাফল্য আসার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। তবে চাইলেই তো আর সবাই মনের মতো কাজ করার সুযোগ পান না। বিশেষ করে এরকম ক্ষেত্রে পরিবার এবং সমাজের সমর্থন পাওয়া যায় খুব কম ক্ষেত্রেই। তবে কেউ কেউ পান। আর সফলতার সিঁড়ি বেয়ে তারা এগিয়ে যান সামনের দিকে।
সারা পৃথিবীর জন্য অভিশাপ হয়ে আসা করোনার সময়ে অনলাইন নির্ভর কাজের ক্ষেত্রে নীবরেই ঘটে গেছে বিপ্লব। ঘরে বসে থাকা মানুষেরা নিজেদের সময় কাটাতেই অনলাইনকে ব্যবহার করে কাজের নতুন নতুন জগতে প্রবেশ করেছেন। মহামারী কোভিডের গৃহবন্দিত্বের পিরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে এবং বিকল্প আয়ের সন্ধানে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। তেমন কোনো গবেষণা না থাকলেও অনলাইন জগতে নজর দিয়ে অনুমান করা যায় পুরুষের চেয়ে সেই তালিকায় নারীরা হয়তো এগিয়েই থাকবে। নানান চ্যালেঞ্জ উতরিয়ে নারীরা হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। কেউ প্রয়োজনে, কেউ আবার শখের বশে।
শখের বশে নিজের যা করতে ভালো লাগে তাই সাজিয়ে গুছিয়ে অনলাইন মাধ্যমে তুলে ধরার মাধ্যমে নতুনমাত্রার পেশাদারও হয়ে উঠেছেন অনেকে। তেমনই একজন সফল উদ্যেক্তা সাথী নুর। আজকের সময়ে এস তার পেশার নামকরণ করা যায় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং বিউটি ভ্লগার হিসেবে। তবে এই পরিচিতি তৈরির বিষয়টা এক দিনে হয়ে যায়নি। খুব সহজও ছিল না এই যাত্রা। নিজের কাজের ক্ষেত্রটাকে বুঝে নিতে এবং সফলতার পথে এগিয়ে যেতে লেগে থাকতে হয়েছে সাথী নুরকে। পাশে সহযোগী এবং প্রেরণা হিসেবে পেয়েছেন তার স্বামীকে।
বলছিলাম করেনার সময়ের কথা। কেননা, সাথীর শুরুটাও করোনার লকডাউনের সময়েই। ২০১৯-এ যখন প্রথম লকডাউন দেয়া হল তখন সাথীর স্বামী তাকে উৎসাহ দেয় গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে। তিনি নিজে একজন পেশাদার গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে বাড়িতে থাকা দিনগুলোতে সাথীকে শেখানোর কাজটা শুরু করেন। তার চাওয়া ছিল সাথী যেনো কারো উপর নির্ভর না করে আত্নবিশ্বাসী হতে পারেন। কখনো প্রয়োজন হলে নিজের দক্ষতায় স্বাবলম্বী হতে পারেন। কিন্তু কয়েকদিন শেখার পরে সাথী দেখলেন যে এই কাজে তিনি তেমন আগ্রহ পাচ্ছেন না। তখন তার স্বামী জানতে চান, কী করতে সাথীর ভালো লাগে?
এমন প্রশ্নে জবাবে সাথী জানান, তার ভালো লাগে নতুন নতুন পোশাক পরতে, সুন্দর করে সাজতে। সাথীর ইচ্ছা শুনে তার স্বামী তাকে উৎসাহিত করে মেকাপ নিয়ে কাজ করতে। সেই থেকে শুরু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সাথী নুরের যাত্রা।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পথচলার শুরুর দিকে কথা স্মরণ করে সাথী নুর বলেন, ‘ইউটিউবের ভিডিও দেখে দেখে চর্চা করে শিখেছি। কিন্তু শুধু মেকাপ শেখাটাই যথেষ্ট ছিলো না। প্রয়োজন ছিলো প্রফেশনালি এডিটিং করা। সেটা আমার হাজবেন্ড আমাকে শিখিয়েছেন এবং হাত ধরে সকল প্রকার গাইডলাইন দিয়ে আমায় এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। উনি আমার অনুপ্রেরণা’।
কেনো সোসাল মিডিয়ায় নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুললেন সাথী নুর? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান যুগে নিজেকে প্রমাণ করার বিশাল এবং সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম সোশাল মিডিয়া। ক্যারিয়ার গড়তে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অনেক বেশি। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই নিজের ক্রিয়েটিভিটি উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজের মতো কাজ করে আত্ননির্ভরশীল হওয়া যায়। যেটা চাকরির জন্য হতাশায় ভোগার চেয়ে অনেক ভালো।
বর্তমানে সাথী নুর তার পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসাভিত্তিক পেজকে প্রমোট করছেন। পোশাক, গহনা, কসমেটিকস, খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসের পেজভিত্তিক প্রমোশন করে থাকেন তিনি। সাথী নুরের প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন নারীর কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সাথী নুর জানান, তার চাওয়া কোন নারী যেনো কারও মুখাপেক্ষী না হয়। প্রতিটি নারী হবে সাবলম্বী,ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ একদিন বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে রুপ নিবে।
সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিউটি টিপস এবং মেকওভারের ভিডিও শেয়ার করেন সাথী নুর। তিনি চান, তার ভিডিও থেকে অন্যান্যরাও মেকওভারের ধারনা নিয়ে যেনো শিখতে পারে এবং এই কাজে যাদের আগ্রহ আছে তারা যেনো এখানে একজন সফল পেশাদার হয়ে উঠতে পারেন।
একজন মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সাথী নুরের ইচ্ছা, আগ্রহী নারীদের মেকওভারের প্রশিক্ষণ দেয়া। যাতে তারা এই প্রশিক্ষণকে কাজিয়ে লাগিয়ে উপার্জনের পথ খুঁজে আত্ননির্ভরশীল হতে পারে তারা।
আগ্রহী নারীদের আত্ননির্ভরশীল করে তোলা একজন সফল মেকআপ আর্টিস্ট সাথী নুরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।