বিদ্যালয়ের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। কাছাকাছি কোন বিদ্যালয় না থাকায় পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়া শিশুরা ঝুঁকে পড়ছে শিশুশ্রমে। তাছাড়া শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া সুবাধাবঞ্চিত শিশুরা দিনের বেশিরভাগ সময়ই রাস্তার পাশে খেলাধুলায় সময় কাটায়। অবহেলিত ওই সাতমুখী বিল এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভাবে বাড়ছে শিশু শ্রম, নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও মাদকাসক্তের মতো মারাত্মক অপরাধ কর্মকাণ্ড।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার (৭নং ওয়ার্ড) সাতমুখী বিল এলাকাটি একসময় পতিত জমি থাকলেও দীর্ঘ একযুগ ধরে ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে শতশত ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানান, সাতমুখী বিল, গোধূলি সিটি ও স্টেডিয়াম পাড়া এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রায় সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নিরক্ষর রয়ে যাচ্ছে ওই এলাকার অধিকাংশ শিশু-কিশোর। শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশু শ্রম, নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও মাদকাসক্তের মতো মারাত্মক অপরাধ। স্কুলে না যাওয়ায় শিশুদের দিন কাটে খেলাধুলায় আর আড্ডায়। সরকারি শিক্ষা প্রকল্পের সুফল না পাওয়া শিক্ষা বঞ্চিত গোধূলি সিটি, স্টেডিয়াম পাড়া ও সাতমুখী বিল এলাকার শতশত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা জানান, সাতমুখী বিল এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় দূরের স্কুলে গিয়ে পড়তে হয়। স্কুলে হেঁটে যেতে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট সময় লাগে। স্কুল দূরে হওয়ায় ক্লাসে যাওয়া হয় না নিয়মিত। তাছাড়া এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতে হলে মহাসড়ক ও ব্যস্ততম সড়ক পাড় হতে হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়।
তারা জানান, স্কুল দূরে হওয়ায় বেশিরভাগ শিশুরা স্কুলে ভর্তিই হয়নি। তাই এলাকার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সাতমুখী বিল এলাকায় যেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার এমনটাই দাবি করেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।
আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম জানান, গোধূলি সিটি, স্টেডিয়াম পাড়া ও সাতমুখী বিল এলাকায় অন্তত ৮শত পরিবার বসবাস করেন। ওই এলাকায় কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার অভাবে বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম ও মাদকের মতো ভয়াবহ অপরাধে যুক্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। সাতমুখী বিল এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে ওই এলাকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, সাতমুখী বিল এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইন মোতাবেক যতটুকু জায়গা প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনীয় জায়গা সরকারকে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন কমলপুর গাছতলাঘাট এলাকার বাসিন্দা ও ইটালি প্রবাসী রিটন উজ্জামান খোকন। জায়গা দাতার দাদা কাজী মোমতাজ মিয়ার নামে যদি স্কুলটির নামকরণ করা হয় তাহলে জায়গা দিতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন।
ইটালি প্রবাসী রিটন উজ্জামান খোকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি অবহেলিত সাতমুখী বিল এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নাই। ফলে বেশিরভাগ শিশু-কিশোর শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। তাই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার কথা চিন্তা করে আমি সরকারি নিয়ম মোতাবেক যতটুকু জায়গা প্রয়োজন, তা দিতে আমি প্রস্তুত আছি। আমি চাই আমার মরহুম দাদা কাজী মোমতাজ মিয়ার নামে যেন স্কুলটির নামকরণ করা হয়।
ভৈরব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, পৌরসভার ৭নং ওর্য়াডভুক্ত সাতমুখী বিল একটি জনবসতি এলাকা। নিকটবর্তী স্কুলের দূরত্ব এক-দেড় কিলোমিটার। আমরা দেখেছি সেখানে একটি বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন। ওই এলাকায় ভর্তি উপযোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। যদি সেখানে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা যায়, তাহলে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ভালো হবে। যদি কোন জায়গাদাতা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে বলবো আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ভবিষ্যতে সুযোগ আসলেই আমরা বিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবনা পাঠাতে পারবো।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এমাসের ৬ তারিখেও যেসকল গ্রামে বিদ্যালয় ছিল না, সেই রকম ৭টি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অতিশ্রীঘ্রই সেই স্কুলগুলোর কাজ শুরু হবে। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি পৌরসভার ৭নং ওর্য়াডের সাতমুখী বিল এলাকা জনবসতি হওয়ায় বিদ্যালয়ের চাহিদা রয়েছে। যদি কোন দানশীল ব্যক্তি জায়গা দিতে চায় তাহলে বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে আমরা সেটি সংযুক্ত করে দিতে পারবো। তার আগে যেসকল তথ্যেও প্রয়োজন সেগুলো যদি আমাদের সরবরাহ করে তাহলে আমাদের জন্য কাজটি অনেক সহজ হবে।