মার্টিনেজের ঢাকায় আসার খবরটি নতুন বা হুট করে ঘটা কোনো ঘটনা না। বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলপ্রীতি, বিশেষ করে আর্জেন্টিনার প্রতি সমর্থনের প্রতি সম্মান জানাতে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ নিজে আগ্রহ করেই ঢাকায় এসেছিলেন, এ গল্পও সবার জানা। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের গোলরক্ষক, বাংলাদেশের সমর্থকরা যাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন বাজপাখি, তিনি ঢাকায় এলেন, চলেও গেলেন। অথচ তার সাথে একটিবার দেখা করার সুযোগ হলো না দেশের কোনো ফুটবলারের!
রহস্যজনকভাবেই যেনো তাকে গণমাধ্যমের সামনেও আনলেন না ঢাকায় মার্টিনেজকে আনা স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ফান্ডেড নেক্সট কোম্পানি।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ারা কোনো আমন্ত্রণ বা আয়োজন ছাড়াই ফুটবলের বাজপাখিকে এক নজর চোখের দেখা দেখতেই এগিয়ে গিয়েছিলে। সেটুকুও হলো না। ঘটনাচক্রে বিমানবন্দরেই ছিল তখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাইঞ্জের বাইরে থেকে দেখলেন কালো রঙের গাড়ি থেকে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ নামছেন। বড় জোর হাতছোঁয়া দূরত্ব। তবুও দেখা হলো না। কথা হলো না বাংলাদেশের ফুটবল অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া ও এমিলিয়ানো মার্টিনেজের মধ্যে। মার্টিনেজকে বাংলাদেশ ফুটবল দলের খবর পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মার্টিনেজের পাশে থাকা স্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলেই নেননি। বুঝতে পেরে অপেক্ষায় থাকা জামাল ভুঁইয়া নিজেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে হতাশা লুকিয়েছেন। অথচ চাইলে এই বিমানবন্দরেই করা যেতো সৌজন্য সাক্ষাতের আয়োজন।
বাংলাদেশের ফুটবল দলের জন্য মার্টিনেজের সাক্ষাৎ স্মরণীয় হয়ে উঠতে পারত, যদি ঢাকায় মার্টিনেজকে আমন্ত্রণ জানানো প্রতিষ্ঠান ফান্ডেড নেক্সট কোম্পানির কর্মকর্তারা নজর দিতেন। বাংলাদেশ দলের গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো আফসোস করে বললেন, ‘আমি গোলকিপিং করি। মার্টিনেজও গোলকিপার। দেখা হলে, কথা হলে পরামর্শ নেওয়া যেত। টেকনিক্যাল বিষয় জানা যেত। আমার ক্যারিয়ারে সেটা কাজে লাগত। উনি তো চলে গেলেন।’
উপস্থিত অনেকেই বলছিলেন, মার্টিনেজের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মার্টিনেজ ও জাতীয় দলের ফুটবলারদের ভিআইপি লাউঞ্জে বসিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য সৌজন্য সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে পারতেন। তাতে মার্টিনেজ যেমন সম্মানিত হতেন, তেমনি বাংলাদেশ ফুটবল দলও সম্মানিত হতো।
বিশ্বসেরা ফুটবলার বাংলাদেশে এলেন, অথচ দেশের একজন ফুটবলারের দেখা পেলেন না-এ কেমন সফর! মার্টিনেজ ফুটবলার। তিনি যে দেশে যাবেন, সেখানেই ফুটবলার থাকবেন। যারাই তাকে আমন্ত্রণ জানাক, একটা দেশের ফুটবলাররা বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে অভ্যর্থনা জানাতে সামনে থাকবেন, এটাই সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। ফুটবল অতিথির জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান। কিন্তু মার্টিনেজ পেলেন না। দেশে এত সাবেক ফুটবলার থাকার পরও একজনকেও দেখা যায়নি অনুষ্ঠানে।
জাতীয় দল ভারত থেকে দুপুরে বিমানবন্দরে নামলেন। তখনই মার্টিনেজ বিমানবন্দরে পৌঁছালেন। পরিকল্পনা থাকলে বিমানবন্দরেই সৌজন্য সাক্ষাতের আয়োজন করা যেত। কিন্তু বাফুফে জানিয়েছে, যারা মার্টিনেজকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার জানিয়েছেন, তারা নাকি জানেনই না কারা আর্জেন্টিনার গোলকিপারকে ঢাকায় আনছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি কোথাও।
বাংলাদেশের সমর্থকদের কথা জানা আছে মার্টিনেজদের। বাংলাদেশে সমর্থকেরা কীভাবে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেয়, সে কথা জানা আছে তাদের। এ দেশের আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা নিজেদের ঘুম হারাম করেন। জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকেন। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনার কোচের কাছে বাংলাদেশের কথা তোলা হয়েছিল। সেই দলের ফুটবলার ঝটিকা সফরে এসে ভক্তদের মুখ দেখতে পারলেন না। মার্টিনেজের কাছেও এটি সুন্দর লাগার কথা নয়।
যে দেশের সমর্থকদের কথা বারবার শুনেছেন, সেই দেশে এসে সমর্থকদের দেখা না পাওয়াটা অবিশ্বাস্য মনে হবে। নিশ্চয় বাংলাদেশ সফরটি তার কাছে অপূর্ণই মনে হতে পারে। আর্জেন্টাইন ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কষ্টের কথা প্রকাশ করেছেন। একাধিক সাবেক ফুটবলার আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, একজন ফুটবলার আরেক জন ফুটবলারকে দেখলে খুশি হন। ছোট করে হলেও এই আয়েজান করা যেত। সংবাদমাধ্যমকেও দূরে ঠেলে দেওয়া হলো। সারা দুনিয়ায় রেওয়াজ আছে, বিদেশি অতিথি ফুটবলারকে সম্মান জানাতে সংবাদমাধ্যমের সামনে আনা হয়।