সব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না, তবু দাম কমানোর চেষ্টা করছি : বাণিজ্যমন্ত্রী

বাজারে জিনিসের দাম বেড়েছে স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মন্তব্য করেছেন, সব কিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না। পেঁয়াজের প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, যে আমদানি করা হচ্ছে, তা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আজ আমাদের দেশিটা ৬৫ টাকা, এটা কমা উচিত বলে আমি মনে করি। তবে আমরা চেষ্টা করছি, সব কিছুই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না। তারপরও দায় আমি নিয়ে বলছি, আমরা চেষ্টা করছি দাম কীভাবে কমানো যায়।

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাতে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিরোধী দলের সদস্যদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সোমবার (২৬ জুন) বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বার বার একটা কথা উঠে আসছে যে, আমি ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ীরা আমার জন্য সুবিধা পাচ্ছেন। যারা এই কথাগুলো বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি। তাদের রাজনীতির কত বছরের অভিজ্ঞতা আমি জানি না, আমি কিন্তু ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমি কিন্তু ব্যবসা করি আজকে ৪০/৪২ বছর। বলেন আপনি ব্যবসায়ী, আপনি ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিচ্ছেন।

গণফোরামের মোকাব্বির হোসেনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানে একজন তো আমাকে পদত্যাগ করতে বললেন। খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনও সমস্যা নেই আমার।

টিপু মুনশি বলেন, কথাটা হলো দাম বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বার বার বলছেন মানুষ কষ্টে আছেন। মানুষকে বলছেন সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। আজকে আমরা কী আমাদের জন্য এই অবস্থায় এসেছি? বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। সেটা কিন্তু আমাদের হিসাবের মধ্যে আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো কথা বলা হয়েছে- যেমন জ্বালানির কথা আসছে, জ্বালানিটা আমি দেখি না। ডিম সেটা তো আমি খবর জানি না, ডিমের দাম বাড়া বা কমার বিষয়টি। যে মন্ত্রণালয় আছে, তারা ঠিক করে দেয়। দাম বেড়েছে কোনো সন্দেহ নেই। পেঁয়াজের কথা বলা হয়েছে। আমরা আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম যাতে কৃষকরা একটু দাম পান। পেঁয়াজে আমাদের ৬ থেকে ৭ লাখ টন ঘাটতি আছে।

মন্ত্রী বলেন, যদি কৃষকরা একটু ভালো মূল্য পান, তাহলে তারা উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হবেন। এ কথা ঠিক যে, ৮০ টাকা বা ৯০ টাকা হওয়া যৌক্তিক নয়। আমরা চেষ্টা করেছি। আমদানির ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাইছিলাম না পেঁয়াজটা আমদানি করতে। দেশেরটাই ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, যাতে মানুষ ন্যায্যমূল্য পায়। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দাম বেড়ে গেছে, আমরা আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি, দাম কমতে শুরু করেছে।

মন্ত্রী বলেন, আজ এত দুরবস্থার মধ্যেও কিন্তু আমরা ৫৮ বিলিয়ন রপ্তানি করেছি। গতবারের তুলনায় ৭ থেকে ৮ ভাগ বেশি হয়েছে। এত সংকটের মধ্যেও আমাদের রপ্তানির মান বেড়ে চলেছে, সেটা কিন্তু বলা দরকার। পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ দিনের মধ্যে ৫০ টাকার মধ্যে চলে আসবে। আমরা মনে করি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে থাকলে সব পক্ষের উপকার হয়।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, এ কথা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলোই একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমরা চেষ্টা করি। কিন্তু, একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম, সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু, তাতে যে সংকটটা হঠাৎ করে তৈরি হয়, আমাদের তো সেটা সইতে কষ্ট হয়। আমরা চেষ্টা করি আলোচনার মাধ্যমে, নিয়মের মাধ্যমে থেকে করতে।

জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, বাজারে গিয়ে দেখেছি, অনেকে কেঁদেছেন। মানুষের পকেটে টাকা নেই। দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির কারণ সিন্ডিকেট। ডিমের বাজারে কারা সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়? এটা তো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে না। মন্ত্রী যেখানে সিন্ডিকেটের কথা বলছেন, সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী কেন তাদের ধরেন না। তিনি তো নিজেই ব্যবসায়ী, তার তো জানার কথা কারা সিন্ডিকেট করে। তার কোনো ভূমিকা নেই।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে। সিন্ডিকেট কি এত শক্তিশালী, সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট শক্তিশালী? এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

জাপার রওশন আরা মান্নান বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You