কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত ১৮শ খামারির প্রায় ১০ হাজার গবাদী পশু। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে , দেশীয় পদ্বতিতে বিভিন্ন জাতের গরু মোটা তাজা করে রেখেছেন স্থানীয় খামারি ও চাষীরা ।
খামারিদের দাবি চোরাই পথে ভারতীয় বা বিদেশী গরু আনা বন্ধে সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয় । বিদেশী গরু আমদানী বা চোরাই পথে এলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানান তারা।
এদিকে কোরবানির পশু নিরাপদ করতে গরু মোটা তাজা করণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে প্রাণী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারে খামারে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন খামারে যাচ্ছে কর্মকর্তারা, গঠন করা হয়েছে ৩ সদস্য বিশিষ্ট ৮টি তদারকি টিম। তাছাড়া খামারিরা যাতে অনলাইনে পশু বিক্রি করতে পারে সেজন্য প্রাণী সম্পদের পক্ষ থেকে অনলাইন কোরবানির পশুর ডিজিটাল হাট নামে ফেসবুক আইডি খোলা হয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ভৈরবে ১৮শ খামারির প্রায় ১০ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া দেশীয় পদ্বতিতে মোটা তাজাকরণ করে প্রস্তুত রেখেছে। কোরবানির ঈদে লাভের আশায় এসব খামারিরা কোন প্রকার রাসায়নিক বা ক্ষতিকর ট্যাবলেট, ডেক্সা মেথাথন ও স্টেরয়েডের মত ভয়ংকর ক্ষতিকারক ওষুধ প্রয়োগ না করে দেশীয় পদ্বতিতে খড়, তাজা ঘাস ও ভূষিসহ পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে গরু মোটা তাজা করেছে। সাধারণ গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটা তাজা ও সুস্থ রাখতে এ ধরণের গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অতি মুনাফা লোভী অসাধু খামারিরা কৃত্রিম উপায়ে ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করণ করলেও এবার প্রাণী সম্পদ অফিসের নজরদারি থাকায় তা করা হচ্ছে না। পশু চিকিৎসকদের পরামর্শে কৃমি, ভিটামিন ও রোগের ওষুধ খাওয়ানো হলেও ক্ষতিকর ওষুধ কৃষকরা খাওয়াচ্ছেন না। এছাড়া এ বছর ভৈরবে ৭টি কোরবানির পশুর হাটে প্রাণী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। যাতে অসুস্থ বা রুগ্ন কোন পশু হাটে বিক্রি করতে না পারে। মানুষ যেন নিরাপদ মাংস পেতে পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক হাটে মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। এবার ভৈরবসহ সারাদেশে কোরবানির গরুর মাংস নিরাপদ থাকবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
খামারি অতুল মিয়া জানান, আমার খামারে ৪০ টি গরু দেশীয় পদ্বতিতে খড়, তাজা ঘাস ও ভূষিসহ পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে লালন পালন করছি। একেকটি গরু ২ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে কিছু গরু খামার থেকে বেচা হয়েছে। আশা করছি বাজার দর ভালো পাবো।
কালীপুর গ্রামের এআর এগ্রো ফার্মের ফাহাদ আমানুল্লাহ বলেন, আমাদের খামারে ৪০টি গরু আছে। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির জন্য গরু কিনতে পারবেন। তবে বর্তমান বাজারে গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় লালন-পালন খরচ বেড়েছে। বাজারে গরুর ভালো দাম না পেলে লাভবান হতে পারবো না। তবে দেশের বাইরে থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকলে গরুর সঠিক দাম পাবো।
পৌর শহরের জগন্নাথপুর গ্রামের কাউন্সিলর হাজী ফজলু মিয়া বলেন, এ বছর প্রথমবারের মতো ৫০টি গরু দিয়ে গরুর খামার শুরু করেছি। খামারে দেশীয় খাবার সবুজ ঘাস, খড়, ভূষি খেতে দিয়ে মোটা তাজা করছি। এখন বাজারে সঠিক দাম পাওয়ার আশায় আছি। এ বছর লাভবান হলে আগামী বছর বড় পরিসরে গরু মোটা তাজা করবো।
ভৈরব উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন কোরবানির পশুর মাংস নিরাপদ রাখতে এবং মানুষ যাতে সুস্থ থাকতে পারে সেজন্য এ বছর ভৈরবে ১৮শ খামারি ব্যক্তি মালিকানা ও প্রান্তিক খামারিরা প্রায় ১০ হাজার গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলা মোটা তাজা করে দেশীয় পদ্বতিতে লালন পালন করেছে। খামারিরা কোন প্রকার পাম ট্যাবলেট, স্টেরয়েড ও হরমন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়া ফার্মেসীগুলোতেও নজরদারি রয়েছে। যেন ক্ষতিকর ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বিক্রি করতে না পারে।
ডব্লিউজি/এমএইচএস