সাংবাদিক নাদিম হত্যার মূল হোতা চেয়ারম্যান বাবু আটক

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার মামলার মূলহোতা জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু র‍্যাবের হাতে আটক হয়েছেন।

পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকা দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া থেকে বকশীগঞ্জ সদর উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুক আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শনিবার (১৭ জুন) সকাল ৭টার দিকে সীমান্তবর্তী ওই এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জের চিলাহাটি ইউনিয়নের চরচিস্তা গ্রামে তার বোনের বাড়ি থেকে আটক হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা।

তিনি জানান, শনিবার ভোরে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে পঞ্চগড় থেকে আটক করা হয়েছে। তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।

এর আগে জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ এবং দল থেকে সাম‌য়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর শাহিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইলের যৌথ স্বাক্ষরিত এক পত্রে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় অভিযুক্ত মাহমুদুল আলম বাবুকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে সাম‌য়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে উপস্থিত হয়ে ৭ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতেও বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ বাজার থেকে নিলক্ষীয়ায় বাড়ি ফিরছিলেন বাংলা নিউজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি নাদিম। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করেন।

পরদিন (১৫ জুন) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলার বকশীগঞ্জের নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নাদিমের। বেলা সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর নানা অপকর্ম নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিক নাদিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন চেয়ারম্যান বাবু। সেই মামলাটি গত বুধবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় নাদিম। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত হামলার নেতৃত্ব দেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আল মোজাহিদ বাবু বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে রিফাত ও তার বাহিনী। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন চেয়ারম্যান বাবু।

পরে স্থানীয়রা নাদিমকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে রাতেই তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা কয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরে মারা যান তিনি।

এদিকে নাদিমের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল দেশের সাংবাদিক সমাজ। জামালপুর প্রেসক্লাব ও বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব ৩ দিনের শোক পালন করছে।

নিহত গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, বাবু চেয়ারম্যানই আমার স্বামীর হত্যাকারী। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি এম শাহীন আল আমীন বলেন, পুলিশ সুপার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে বাবু চেয়ারম্যানসহ সব আসামিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা সকল সাংবাদিকরা মাঠে আছি।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You