১৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আদানি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু

দীর্ঘ তেরো ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ভোর রাত থেকে আবারও আদানির কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ বি এম বদরুদ্দোজা খান। তিনি জানান, আজ সকাল ৯টায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পরিমাণ ছিল ৬০৭ মেগাওয়াট।

বদরুদ্দোজা খান বলেন, গতকাল বিকেল ৩টায় পিজিসিবির প্রকৌশলীগণের দ্রুত পদক্ষেপে লাইনটি চালু করা হয়েছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাবতীয় কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্নের পর রাত ৩টা ৪৩ মিনিটে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।

পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, গতকাল ২টা ৪৬ মিনিটের দিকে তীব্র বাতাসে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ। আদানির বিদ্যুৎ আনার জন্য বাংলাদেশ–ভারত অংশে যে ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে তার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর অংশে সঞ্চালন লাইনে সমস্যা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, দেশব্যাপী চলছে তীব্র লোডশেডিং। অন্যদিকে গরমে হাঁসফাঁস করছে দেশের মানুষ। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নিচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। এর মধ্যে আছে ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ আনা। এই চেষ্টার মধ্যে সঞ্চালন লাইনের সমস্যার জন্য আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পিডিবি গত কয়েক মাস ধরে গড়ে প্রায় ৭৫০–৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পেয়ে আসছিল।

আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ জাতীয় গ্রিড থেকে বন্ধ থাকায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসি ও ডেসকো জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঢাকার লোডশেডিং বেড়েছিল প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট।

১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পর দেশব্যাপী লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করে। চলমান লোডশেডিংয়ের তীব্রতা কমানোর জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সংসদে বলেছেন, আদানি থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়াতে বিদ্যুৎ বিভাগ চেষ্টা করছে।

পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বিকেল তিনটার দিকে সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৪৬৫ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহ। লোডশেডিং ছিল ৩ হাজার ৯৬৫ মেগাওয়াট।

বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বিশাল ঘাটতি থাকায় ঢাকাতে প্রতিদিন গড়ে ৪–৫ ঘণ্টা লোডশেড হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং ছাড়িয়ে গেছে ১০ ঘণ্টার বেশি।

ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বিকেলে আদানির বিদ্যুৎ আনার জন্য যে সঞ্চালন লাইন আছে সেটা ট্রিপ করে গেছে। এই জন্য ডিপিডিসি এলাকায় লোডশেডিং বেড়েছে ২০০ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে হঠাৎ করে জাতীয় গ্রিড থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে দেশের সব জায়গায়।

আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে গতকাল ডেসকোকে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেওয়া হয়েছে ১০০ মেগাওয়াট।

গতকাল বিকেলের দিকে ডেসকো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৭৫ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। সঞ্চালন লাইন ট্রিপ করার কারণে আদানির বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় বিকেল তিনটার দিকে ৪৭৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। ডেসকোর এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ডেসকোতে কখনো এই পরিমাণ লোডশেডিং হয়নি।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You