হত্যার ৯ মাস পর মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ

ভারতীয় সীমান্তে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার নয় মাস পর আব্দুস সালাম নামে এক যুবককে বাংলাদেশে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ।

রোববার (২১ মে) সাতমেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যার দিকে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তার মরদেহ গ্রহণ করেন পরিবারের লোকজন। এ সময় সময় বিজিবি, বিএসএফ সদস্য ছাড়াও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহত ব্যক্তি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের পতিপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামে ছেলে আব্দুস সালাম। নিহতের পরিবার জানায়, গত বছরের ২৪ আগস্ট ভোরে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন পঞ্চগড় উপজেলা সদরের অমরখানা সীমান্তের বিপরীত ভারতের বড়ুয়াপাড়া সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশী যুবক আব্দুস সালামসহ তিন যুবককে ধাওয়া দেন স্থানীয়রা। এ সময় অন্য দুই জন পালিয়ে গেলেও আব্দুস সালামকে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে ভারতের নাগরিকরা। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশী ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে।

এদিকে ঘটনাটি ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়া প্রচার হলে নিহতের পরিবার বিষয়টি জানতে পারেন এবং মরদেহ ফেরতের জন্য বিজিবির মাধ্যমে ভারতের কাছে আবেদন করে। পরে দুই দেশের আইনি জটিলতা এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে নিহতের এক ভাই ভারতে গিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ নিয়ে আসেন।

রাতে সালামের মরদেহ বাসায় আসতেই কান্নার রোল পড়ে যায়। স্ত্রী ও তার মায়ের আর্তনাদে যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যায়। এদিকে শেষ বারের মত নিহত আব্দুস সালামকে দেখতে তার বাসায় ছুটে যান আত্মীয়-স্বজন সহ স্থানীয়রা। পরে রাতেই তার জানাজা শেষে মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহত সালামের বড়ভাই আলিম হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে পরে জানতে পারি তাকে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে আমার ভাইয়ের মরদেহ ফেরতের জন্য বিজিবিসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি। দীর্ঘদিন পর হলেও স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় মরদেহ ফেরত পাওয়া গেছে।

নিহত সালামের মা আলেমা খাতুন বলেন, আমার ছেলে ওই দিন রাতে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। পরে স্থানীয় দু’জন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। সকালে উঠে শুনি সালাম বাসায় নেই। পরে ওই দিন দুপুরে তার মৃত্যুর সংবাদ পাই। আমার ছেলেকে যারা পিটিয়ে মারলো। আল্লাহ তুমি তাদের বিচার করো।

চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ভারতে গরু আনতে গিয়ে স্থানীয় সালাম নামে একজন মারা গেছেন বলে জানা গিয়েছিল। মরদেহটি ভারতের জলপাইগুড়ি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় (ফ্রিজিং করে) রাখা ছিল। এরপর নিহত সালামের মেঝভাই আলিম উদ্দীন ভারতে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন। দীর্ঘ নয় মাস পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করে বিএসএফ ও ভারতীয় পুলিশ। তবে মরদেহ আনার খরচ সালামের পরিবারের পক্ষ থেকেই বহন করা হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, দীর্ঘ প্রায় নয় মাস পর নিখোঁজ আব্দুস সালামের মরদেহ পেয়েছে তার পরিবার। মরদেহ নিয়ে আসার সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। এ ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারের একটি সাধারণ ডায়েরির প্রস্তুতি করা হবে।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You