রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

৯ ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পান ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল। তাতে বাংলাদেশ মোটামুটি লড়াকু সংগ্রহ পায়। ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে ২৭৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। তামিম ৬৯ আর মুশফিক করেন ৪৫ রান। মেহেদি মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৭। ৩৫ করে আউট হন লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিরভাগ সময়ই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছেই রাখতে পেরেছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু শেষ দশ ওভারে ক্যাপ্টেন তামিমের আউট অব দ্যা বক্স ক্যাপ্টেন্সির সাথে বোলার ফিল্ডারদের দুর্দান্ত কামব্যাক ম্যাচের মোড় বদলে দেয়।

হঠাৎ করেই অনিয়মিত বলার নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে বল তুলে দেন তামিম। এসেই উইকেট তুলে নেন শান্ত। পরের তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয় সহজ করে দেন মোস্তাফিজুর রহমান, একাদশে ফেরা এই বোলার নিয়েছেন মোট চার উইকেট।

রোববার (১৪ মে) ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে আয়ারল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা। জবাব দিতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রানের বেশি করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করলো তামিম ইকবালের দল।

আগের ম্যাচে কোনো বদল ছাড়াই নেমেছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে আসে তিন পরিবর্তন। এ দিন অভিষেক হয় মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও রনি তালুকদারের, একাদশে ফেরেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক ওয়ানডেতে তেমন কিছু করতে পারেননি রনি। ১৪ বল খেলে ১ চারে কেবল ওই ৪ রানই করেছেন রনি।

এরপর অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গী হন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত শতক করা শান্ত ৩২ বলে ৩৫ রান করে ক্রেইগ ইয়াংয়ের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন।

এরপর চারে নামা লিটন দাস ৩৯ বলে ৩৫ রান করে ম্যাকব্রাইনের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অফে।

ব্যাটারদের এই যাওয়া-আসার ভেতর এক প্রান্ত আগলে থাকেন তামিম। যদিও তার রান তোলার গতি ছিল স্লো। শুরুতে জীবন পাওয়া তামিম ৯ ইনিংস পর এসে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। ৬ চারে ৮২ বলে ৬৯ রান করে জর্জ ডকরেলের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি।

১ চারে ১৬ বলে ১৩ রান করে ডকরেলের বলেই বোল্ড হন তাওহীদ হৃদয়ও।

১৮৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তারা দুজনও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। তাদের জুটিতে ৭৫ রান আসে।

৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ বলে ৪৫ রান করে ম্যাকব্রাইনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মুশফিক আউট হলে এই জুটি ভাঙে। মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে আর ৪ রান যোগ করে আউট হয়ে যান মিরাজও। ৩ চারে ৩৯ বলে তার ব্যাটে আসে ৩৭ রান। তাদের ফেরার পর বাংলাদেশের রানও আর বাড়েনি খুব একটা। অলআউট হয় সফরকারীরা।

রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। ১৬ বলে ৪ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আয়ারল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটার স্টিফেন ডোহানি। এরপর পল স্টার্লিংয়ের সঙ্গে ৯৯ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক বালবার্নি।

তাদের জুটি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আয়ারল্যান্ডের হাতে। ৬ চারে ৭৮ বলে ৫৩ রান করা বালবার্নিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফেরান এবাদত হোসেন। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ বলে ৬০ রান করা স্টার্লিংয়ের উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

তাদের বিদায়ের পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার। কিছুতেই যখন উইকেট মিলছিল না তখন ৪২তম ওভারে শান্তকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার ওভারের পঞ্চম বলে তাকে তুলে মারতে যান টেক্টর, লাফিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন লিটন। শান্ত পান আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট।

এরপর ৪ বলে ১ রান করা কার্টিস ক্যাম্ফারকে আউট করে চাপ আরও বাড়ান মোস্তাফিজ। ৪৫তম ওভারে এসে জর্জ ডকরেলকে আউট করেন তিনি। তখনও ক্রিজে ছিলেন হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া টাকার, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিও ছিলেন এই ব্যাটার।

নিজের পরের ওভারে এসে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩ বলে ৫০ রান করা টাকারকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজ। আগের দুই ম্যাচে একাদশে জায়গা না পাওয়া এই পেসার ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ৪৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। তার এমন বোলিংয়ের পরও ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল।

শেষ দুই ওভারে ২৪ রান দরকার ছিল আয়ারল্যান্ডের। কিন্তু ৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী দিয়ে ফেলেন ১৪ রান। অভিষেকে পুরো ম্যাচজুড়েই বেশ খরুচে ছিলেন তিনি, ৮ ওভারে দিয়েছেন ৬৪ রান।

তার বাজে বোলিংয়ের পর শেষ ওভারে আসেন হাসান মাহমুদ। তিনি করেন দুর্দান্ত বোলিং। দুই উইকেট নিয়ে দেন কেবল ৫ রান। ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। ম্যাচ-সেরা হন মোস্তাফিজ এবং সিরিজ সেরার পুরস্কার ওঠে শান্তর হাতে।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You