সড়কে গতিসীমা নীতিমালা আসছে : সড়ক সচিব

সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে গতিসীমা নীতিমালা আসছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘পরিবহনের গতি কমানো গেলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। এর জন্য আমরা একটা গাইডলাইন তৈরির কাজ করছি। আপনারা দ্রুতই একটি নীতিমালা পাবেন।’

আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

‘সড়ক ও যানবাহনের প্রকারভেদে গতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং এবং বাস্তবায়ন’–শীর্ষক এই বৈঠকে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘হাইওয়েগুলোতে গতিসীমা ৮০ করা হয়েছে। আমার কাছে কেউ একজন ফোন করে দাবি করেছেন, হাইওয়েতে ৮০ কিলোমিটার বেগে চালানো যায়? এই গতিসীমা ১০০ করে দিন। এগুলোই হচ্ছে আমাদের বর্তমান দাবি। কিন্তু আমি এসবের পক্ষে নই। যেখানে স্পিড বাড়বে সেখানে দুর্ঘটনা বাড়বে। তাই গতিসীমা কমানো উচিত। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

গোলটেবিল বৈঠকে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর এম খালেদ মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। গতি সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সেভাবে পরিকল্পনা করে সড়ক তৈরি করতে হবে। শুধু দুর্ঘটনার জন্য চালককে দোষারোপ করলে হবে না। পথচারী থেকে চালক সবাই যেন বুঝতে পারে এমন রোড সাইন ব্যবহার করতে হবে।

নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বলেন, ‘পথচারী হিসেবে সবচেয়ে অসহায় বোধ করি এখন। আমার এক বন্ধু সেদিন গুলশানের ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় স্ল্যাব ভেঙে নিচে পড়ে গিয়ে হাঁটু ভেঙে যায়। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব অবহেলায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না। কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত। এ ছাড়া গাড়ি চিহ্নিত করতে বড় নম্বর প্লেট স্পষ্ট করে বসাতে হবে এবং রঙের কম্বিনেশন থাকতে হবে যেন দূর থেকেও দেখে বোঝা যায়।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এডিসি সোহেল রানা বলেন, ‘আইন প্রয়োগ করাটাই আমাদের কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা ঢাকা শহরের জ্যাম কমাতেই ৯৯ শতাংশ সময় ব্যয় করতে হয়। যার ফলে আমরা অন্য বিষয়গুলো ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি না। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে সড়ক কম, গাড়ি বেশি।’

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য দেয়। আসলে আমাদের কাছে প্রপার ডেটা নেই। যার ফলে আমরা কাজ করতে পারি না। দুর্ঘটনার সঠিক ডেটা তৈরি করা উচিত।’

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থা বুঝে আমাদের গতিসীমা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের কোনো এক সড়কে গতিসীমা দিয়ে রাখলাম ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু বন্যার সময় সেখানে সে গতিতে চলা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে সেখানে ভ্যারিয়েবল সাইনবোর্ড থাকা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেগুলো করতে পারি, যেগুলো করা সম্ভব সেগুলো করতে হবে। হেলমেটের ব্যবহার, অটোমেটিক টোলের ব্যবস্থা করা, সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কেন আমরা করতে পারছি না? এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। স্কুল পর্যায় থেকে আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর কোনো গতিসীমা নির্ধারণ বা নিয়মনীতি করলে তা যেন চালকেরা জানতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন প্রশাসন ও সড়ক নিরাপত্তা অনুষ্ঠানের পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন, হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জী, বিআরটিএর ঢাকা বিভাগের পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ, বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) আমজাদ হোসেন, নিসচার মহাসচিব লিটন এরশাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন এবং ডিআরইউ সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুসহ আরও অনেকে।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You