কাল প্রাণের বইমেলা, শেষ সময়ে চলছে ব্যস্ততা

বাকি আর কয়েকটি ঘণ্টা, রাত পোহালেই শুরু হবে এবারের অমর একুশে বইমেলা। করোনা মহামারিতে ঐতিহ্যগত রীতিতে পহেলা ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত না হলেও, এবছর ঐতিহ্যগত রীতিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রাণের বই মেলা। এ দিকে শেষ সময়ে স্টল গোছানো ও বই সাজানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মীরা।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সূর্য ডোবার আগ মুহুর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরে দেখা যায় বইমেলার শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, প্রকাশকসহ মেলার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলে। প্রত্যেকের যেন হাই ফেলার সময়টুক পর্যন্ত নেই। এদিকে ছোট-খাট ট্রাকে করে মেলা প্রাঙ্গণে আনা হচ্ছে সারি সারি বই। অন্যদিকে সেগুলো নামিয়ে স্টল সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউবা স্টলকে শেষ সময়ে তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলছেন দৃষ্টি নন্দন করতে। কেউবা স্টল সাজানো শেষে বিশাল পর্দা টাঙিয়ে রেখেছেন।

কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মানসুর আলম। মাটিতে রাখা সারি সারি বই এক এক করে তুলে স্টলের বিভিন্ন থাকে সাজাচ্ছেন। মানসুর জানান, নির্মাণ কাজ শেষ আমাদের। এখন শুধু বই সাজানোর বাকি। আশা করছি রাতের মধ্যে বই সাজানোর কাজ শেষ হবে। ক্রিয়েটিভ ঢাকা প্রকাশনীর প্রকাশক আবিদ এ আজাদ জানান, শেষ সময়ে স্টল কাজের নির্মাণ একটু ঝালিয়ে নিচ্ছি। রাতের মধ্যে লাইটিং, বই সাজানোর কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করছি।

এদিকে বাংলা একাডেমির অধিকাংশ স্টলের নির্মাণ কাজের পাশাপাশি বই সাজানোসহ অন্যান্য সাজ-সজ্জার কাজ শূন্যের কোটায়। বাংলা একাডেমির বিক্রয়কর্মী মো. মেহেদী জানান, আমাদের সকল কাজই শেষ বলা চলে। এখন শুধু প্রহর গণনার বাকি।  বাংলার একাডেমির বই সাজানো যেহেতু শেষই বলা চলে, এখন যদি পাঠক বই কিনতে চায়, বিক্রি করবেন কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বলেব, “না, এখন বিক্রি করা হবে না। আগামীকাল থেকেই বিক্রি শুরু হবে।”

বইমেলার বিন্যাসে পরিবর্তন: এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরও ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী: ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে মেলার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করবেন এবং সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা উপস্থিত থাকবেন।

তিন স্তরের নিরাপত্তায় থাকবে বইমেলা: বইমেলাকে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দপূর্ণ করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য মেলার প্রবেশ মুখগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এমনটাই মঙ্গলবার সকালে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের জানান।

মেলার সমসূচী: মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চারটি প্রবেশপথ ও চারটি প্রস্থান পথ দিয়ে দর্শনার্থীরা চলাচল করতে পারবেন। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তারা সকাল ৮টায় মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত সাড়ে ৮টার পর সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে। এছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে ‘শিশুপ্রহর’।

উল্লেখ্য এবারের বইমেলার জন্য ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট (স্টল) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৭৬টি স্টল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ডব্লিউজি/এআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You