পাচারের উচ্চ ঝুঁকিতে উপকুলের মানুষ

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকায় প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে মানবপাচার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবপাচার বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে । সুন্দরবন এলাকা থেকে নিয়মিত মানবপাচার হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবর্তী সুন্দরবন, খুলনা ও সিলেট ঝুঁকিপূর্ণ বলছে জাতিসংঘ । ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় সুন্দরবন অঞ্চলের ফসল ও বসত-ভিটা নষ্ট হচ্ছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে দ্য গ্লোবাল অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন পারসন অ্যান্ড দ্য স্মাগলিং মাইগ্র্যান্টস শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। বৈশ্বিক এই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে ফসল,মানবপাচার ও সম্পদহানির বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর দুর্গত এলাকার ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র এই সুযোগের ফায়দা নিতে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের শোষণ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ব্যাপক আকারে ওই এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের বিদেশে কাজের কথা বলে প্রলুব্ধ করে। দেশে ও বিদেশে এই চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এর ফলে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে যারা ঢাকা কিংবা কলকাতায় যাতায়াত করে, তারা বেকায়দায় পড়ে।

বিশ্বের ১৪১টি দেশের মানবপাচারবিষয়ক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে । ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শনাক্ত করা মানবপাচার মামলার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী, আঞ্চলিক এবং জাতীয় স্তরে মানবপাচারের একটি প্রবাহ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে।প্রতিবেদনে মানবপাচারবিষয়ক ৮০০টি মামলার সারাংশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৭৩০টি মানবপাচারের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৭ সালে মানবপাচারের সংখ্যা ছিল ৭৭৮ এবং ২০১৮ সালে ৫৬১।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে বৈশ্বিকভাবে কমেছে মানবপাচারের সংখ্যা। ২০১৯ সালের তুলনায় বৈশ্বিকভাবে পাচার কমেছে ১১ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় তা ৩১ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মানবপাচারে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। করোনা মহামারির কারণে…, বিভিন্ন দেশের সর্বসাধারণের চলাচলের স্থানগুলো বন্ধ ছিল। সে সময় নানা বিধি-নিষেধ ছিল। সেই বিধি-নিষেধে পাচারের তথ্য আরো বেশি গোপন হয়েছে। এতে বেড়েছে ভুক্তভোগীদের সমস্যা।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের মূল অংশ তুলে ধরে্‌ জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থার ন্যাশনাল প্রগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মাহদি হাসান। আরো, তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান এবং ইউএনওডিসির সদর দপ্তরের গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর এইমি কমরি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মানবপাচার ও সীমান্তে অপরাধ বন্ধ করা জটিল বিষয়। এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সরকার কঠোর অবস্থানে। আমি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মানবপাচার শনাক্ত করার সক্ষমতা জোরদার…, করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। মানবপাচারের পাশাপাশি পাচারের শিকার হওয়া অনেকেরই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার করা হচ্ছে, যা অমানবিক ও ফৌজদারি অপরাধ। মানবপাচার প্রতিরোধে উপযুক্ত ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা তৈরিতে জোর দেওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক ইসলাম শাতিল বলেন…, মানবপাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি বৈশ্বিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। মানবপাচার প্রতিরোধে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক ভূমিকা পালন করছে। সে জন্য সীমান্তে অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা দরকার। তাদের সহায়তা ছাড়া মানবপাচার দমন করা সম্ভব হবে না।

এছাড়া, আরো উপস্থিত ছিলেন ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা, আইওএম বাংলাদেশের মিশনপ্রধান এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের সমন্বয়ক আবদুসাত্তর এসোয়েভ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল আলম শেখ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস প্রমুখ।

ডব্লিউজি/এমআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You