তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শুরু আজ

তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে আজ । মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনে দেশের ৮ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররাও অংশ নেবেন। এবারের ডিসি সম্মেলন অন্যান্য বছরের বছরের তুলনায় ভিন্ন গুরুত্বের দিক থেকে।

ডিসি সম্মেলন চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনে ২৬টি কার্য অধিবেশনে ২৪৫টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়তো এটিই হচ্ছে শেষ ডিসি সম্মেলন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন । উদ্বোধনের পর করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন জেলা প্রশাসকরা। সম্মেলন থেকে ডিসিদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব…, পালনের ক্ষেত্রে ডিসিরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠানের পরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ২৬ জানুয়ারি তৃতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বিভাগীয় কমিশনাররাও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত থাকবেন।

জানা গেছে, এ ছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চেয়ারম্যান করাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে অন্তত ২৪৫টি প্রস্তাব এসেছে বলে জানা গেছে। সম্মেলনে তিন দিনে…, ২৪টি অধিবেশনে এসব প্রস্তাবসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তার ভিত্তিতেই নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত।

সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসি সম্মেলনে নেওয়া ২৪২টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ১৭৭টি বাস্তবায়ন হয়েছে। এখনও অবাস্তবায়িত রয়েছে ৬৫টি। যা মোট সিদ্ধান্তের ২৭ শতাংশ। সম্মেলনে তিন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে, স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৭২টি। যার মধ্যে ৫৮টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যা শতকরা ৮১ শতাংশ। মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১০৫টি। এরমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৭৭টি। দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৬৫টি। যার মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪২টি সিদ্ধান্ত।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের ডিসি সম্মেলনে আলোচনার জন্য যেসব প্রস্তাব ডিসিরা দিয়েছেন সেসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, মাঠপ্রশাসনে জেলা প্রশাসকরা হাসপাতাল ও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিল ও কারাবন্দিদের ভিডিও কলে আত্মীয়স্বজনদের কথা বলার সুযোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। সরকারি রাজস্ব প্রশাসনের উন্নয়ন বরাদ্দে ডিসিদের আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা চেয়েছেন। খাস জমি বন্দোবস্তের কবুলিয়ত দলিল বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। ডিসির এলআর ফান্ডে কন্টিনজেন্সি খাতের ব্যয়ের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অফিসকে কাজের সুবিধার্থে ডিসি অফিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করার প্রস্তাব রয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে অধিগ্রহণ বা বরাদ্দ করা জমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে ডিসির অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলায়-উপজেলায় এডিসি ও এসিল্যান্ডের সরকারি বাড়ি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিসি-ইউএনওকে সভাপতি করে জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।

জেলা ও উপজেলায় সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হিসেবে বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এই কমিটির সহসভাপতি। তারপরও ডিসি-ইউএনওকে সভাপতি করে জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

ডিসিরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ বন্ধের সুপারিশ করেছেন। এমপিওভুক্ত বা মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এখন মূল বেতনের পুরোটা সরকার থেকে পান। এর সঙ্গে সামান্য কিছু ভাতা দেওয়া হয় তাদের। তবে, বেসরকারি হওয়ায় তারা সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পান। ডিসিরা এই সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন । তাই এবারের ডিসি সম্মেলনে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্যও সুনির্দিষ্ট বিধিমালা করার প্রস্তাব রয়েছে ।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জানিয়েছেন, ডিসি সম্মেলন সরকারের একটি নিয়মিত কর্মসূচি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ডিসিদের মাধ্যমেই সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয় বলে ডিসি সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিসিরা কাজ করতে গেলে যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হন সেখানেই তারা কিছু প্রস্তাব পাঠান। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার পর কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকারের কল্যাণ বয়ে আনে বলে আমি মনে করি।

ডব্লিউজি/এমআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You