মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা পতাকাবাহী রুশ জাহাজ ‘উরসা মেজর’ বাংলাদেশ ও ভারতের বন্দরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস করতে পারেনি । নানা নাটকীয়তার পর এবার জাহাজটি যাচ্ছে চীনের দিকে। দক্ষিণ চীনের সায়েনথো বন্দরে (সিএনএসটিজি) বহন করা পণ্যগুলো খালাস করার কথা রয়েছে সেটির।
কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র বলছে, ভারতের বন্দরে ভিড়তে না পারায় জাহাজটিকে রুট পরিবর্তন করিয়ে চীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চীনের সায়েনথো বন্দরে গিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস করতে চায় রাশিয়া। আশা করা হচ্ছে, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জাহাজটি চীনের বন্দরে গিয়ে পৌঁছাবে।
গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্সের তথ্য বলছে, উরসা মেজর জাহাজটি বর্তমানে বঙ্গপোসাগরে ভারতের অংশের মাঝ সমুদ্রে রয়েছে। জাহাজটি সায়েনথোর দিকে যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে আটদিনের মাথায় জাহাজটি সায়েনথো বন্দরে গিয়ে পৌঁছাবে।
এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজটি নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। রোববার (২২ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার এমন আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার জাহাজ পাঠাবে তা বাংলাদেশ আশা করেনি। জাহাজের পণ্য খালাস নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা রাশিয়াকে বলেছি তাদের যে জাহাজগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে…, সেগুলো ছাড়া অন্য জাহাজে পণ্য পাঠাতে। নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা জাহাজ গ্রহণ করতে চাই না। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমাদের কাছে তাজ্জব লেগেছে, রাশিয়া জেনেশুনে জাহাজের নাম পরিবর্তন করে পাঠিয়েছে।
উরসা মেজর জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয়, ওই জাহাজটি আসলে উরসা মেজর নয়। এটি মার্কিন…, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা স্পার্টা ৩ এ’ জাহাজ। রং ও নাম বদল করে জাহাজটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে স্পার্টা ৩ এ’র সনদ নম্বর। যাচাই করে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়।
বাংলাদেশে ভিড়তে না পেরে জাহাজটি এ মাসে ভারতের হলদিয়া বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। ভারতে পণ্য খালাস করতে না পারলেও জাহাজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। রূপপুর…, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে, তারা ভেবেছিল ভারতে পণ্য খালাস করে তা বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। তবে মার্কিন চাপে পণ্য ভারতে খালাস করতে দেওয়া হয়নি, তাই সেটি ফেরত যেতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চান, রাশিয়ার জাহাজ ফেরত দেওয়াকে কেন্দ্র করে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে যাচ্ছে কিনা।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটু দেরি তো হবেই। ভারতে খালাসের কথা বলা হচ্ছে। এ রকম বার্তা আমাদের কাছে ছিল না। এটা বাণিজ্যিক বিনিময়ের বিষয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো আইনসিদ্ধ পদ্ধতিতে আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আশা করি সেটা হবে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিষয়টা দেখবেন এ প্রকল্পের ধীরগতি হবে কিনা । তিনি বলেন, সেই জাহাজটিকে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি। একই কারণে ভারতে পণ্য খালাস করতে পারেনি।
ডব্লিউজি/এমআর