
চিকিৎসা বিভ্রাটের শিকার হয়েছেন তসলিমা নাসরিন৷ সম্প্রতি এক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে৷ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে৷ ‘লজ্জা’-র লেখিকার অভিযোগ, হাসপাতালে সম্পূর্ণ ভুল চিকিৎসা করা হয়েছে তাঁর৷ ভুলের মাশুল ও খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে৷ খবর নিউজ১৮।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেই তিনি নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে দেখা যাচ্ছিল তিনি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছেন৷ তাঁকে ঘিরে আছেন কয়েক জন, যাঁদের দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা সাহিত্যিকের শুভাকাঙ্ক্ষী৷ দেখা করতে এবং কুশল সংবাদ নিতে এসেছেন৷ এর পর একাধিক পোস্ট করেন তসলিমা৷ জানান তাঁর অভিজ্ঞতা৷
‘আমার মেয়েবেলা’-র স্রষ্টার তিক্ততা এতটাই চরমে পৌঁছেছে, তিনি নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ফেসবুক লেখেন, ” ধিক্কার দিচ্ছি নিজেকে। ধিক্কার দিচ্ছি এতকালের আমার মেডিক্যাল জ্ঞানকে। আমাকে হাসপাতালে মিথ্যে কথা বলা হয়েছিল যে আমার হিপ বোন ভেঙ্গেছে।
আমার জীবনে কোনও জয়েন্ট পেইন ছিল না, জয়েন্ট ডিজিজ ছিল না। আমাকে মিথ্যে কথা বলে, ফিমার ফ্র্যাকচারের ট্রিটমেন্টের নামে আমাকে হিপ জয়েন্ট কেটে, ফিমার কেটে ফেলে দিয়ে আমাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তসলিমার অভিযোগ, তিনি অপরাধ চক্রের শিকার৷ জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার তিনি নিজের এক্সরে রিপোর্ট দেখেছেন৷ তাঁর কোনও ফ্র্যাকচার হয়নি বলেই দাবি লেখিকার৷ লিখেছেন ‘‘ আমার কোথাও কোনও ফ্র্যাকচার হয়নি সেদিন। ফ্র্যাকচার হয়নি বলে আমার হিপ জয়েন্টে কোনও ব্যথা ছিল না, কোনও সুয়েলিং ছিল না।’’
তবে তাঁর কোনও পোস্টেই তসলিমা অভিযুক্ত চিকিৎসক বা হাসপাতালের নাম উল্লেখ করেননি৷ তবে এটা ধারণা করা যায় এই হাসপাতাল বাংলাদেশে নয়৷ কারণ তসলিমা লিখেছেন ‘‘আমাকে বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে দেখা হয়েছে। যার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে অপারেশান করা হবে। সেই নিরীহ রোগী দেশে ফিরে যাবে, এবং ভেবে সুখ পাবে যে তার ট্রিটমেন্ট হয়েছে।’’
তাঁর সরল বিশ্বাসের সুযোগেই যে এই পরিস্থিতি, সে কথা আগের পোস্টে লিখেছেন তসলিমা৷ তাঁর উপলব্ধি, মানুষকে বিশ্বাস করার ফল কী হতে পারে, তা তিনি টের পেলেন নিজের জীবন দিয়ে৷ তাঁর কথায়, ‘‘ হাসপাতালের এক ডাক্তারকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভেবেছিলাম সে বোধ হয় বন্ধু, তাকে জানিয়েছিলাম যে পড়ে গিয়েছিলাম ঘরে, এক্সরে করতে হবে।…সেই বন্ধু আমাকে পাঠিয়ে দিল তার হাসপাতালের অর্থপেডিক ডাক্তারের কাছে যিনি হিপ রিপ্লেসমেন্টের এক্সপার্ট। সেই এক্সপার্ট শুরু থেকে আমার ফিমারের সামান্য ফ্র্যাকচারের ফিক্সেশান টিটমেন্ট না করে আমার হিপ রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। আমি বাধা দিয়েছি। তিনি বারবার এসেছেন আমাকে কনভিন্স করতে। তিন চারজন ডাক্তারকে পাঠিয়েছেন কনভিন্স করতে।’’
এখানেই শেষ নয়৷ তলসিমার আরও অভিযোগ, চিন্তা করার জন্য তাঁকে কোনও সময় দেওয়া হয়নি৷ এমনকি, কারওর সঙ্গে কথা বলার বা শুভাকাঙক্ষীদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগও তিনি পাননি৷ যে কারণে হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়, সেগুলিও পর পর তিনি লিখেছেন৷ তার পর জানিয়েছেন এর মধ্যে একটিও তাঁর ক্ষেত্রে হয়নি৷ লিখেছেন, ‘‘ আমার জয়েন্টে কোনও ধরণের রোগ ছিল না…। জয়েন্ট আমার চমৎকার ছিল, কোনওদিন কোনও পেইন ছিল না।যে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেই সমস্যার ট্রিটমেন্ট না করে ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলে আমার শরীরের সুস্থ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে। ’’
চিকিৎসকদের এহেন আচরণে তিনি হতবাক৷ বুঝতে পারছেন না কী করে এমন ‘অপরাধ’-এর শিকার তিনি নিজেকে হতে দিলেন! তসলিমার এই ক্ষোভে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নেটিজেন তথা তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে৷ তাঁরা মন্তব্যবাক্সে লিখেছেন তসলিমার উচিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা৷
ডব্লিউজি/এআর