লক্ষ্মীপুরে ফের র‍্যাবের অভিযানে ২৭ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

র‍্যাব সিপিসি -৩ এর অভিযানে লক্ষ্মীপুর সদরের চর রমনী মোহন থেকে ২৭ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে । গত ১৬ জানুয়ারী র‍্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালীর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানাধীন পূর্ব চর রমনী মোহন এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে প্রায় একাশি লক্ষ টাকা মূল্যের ২৭,০০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক ভাবে জানা যায় যে, ইয়াবা ট্যাবলেট টেকনাফ সীমান্ত এলাকা হতে সংগ্রহ করে সমুদ্র পথে মাছ ধরার ট্রলার যোগে নিয়ে এসেছিলো মাদক ব্যবসায়ীরা। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট খুচরা মূল্যে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট ঘটনাস্থলে মূলত রেখেছিল। উক্ত মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট পলাতক ও অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হলেও দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা গুলো থেকে প্রতিনিয়ত ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি র‌্যাবের দুটি অভিযানে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় জেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল দৃষ্টি হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তায় জেলা জুড়ে মাদকের অবাদ ব্যবহার থাকলেও এই জেলায় মাদকের এতো বড় কারবারি রয়েছে তা জানা ছিলোনা স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা জানান উদ্ধারকৃত ইয়াবার সাথে গ্রেফতার মাদক কারবারিরা দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকায় মহিষ চুরি, চর দখল, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাদের সাথে জড়িত থাকলেও তারা যে এই সকল কিছুর আড়ালে ইয়াবার মতো মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত তা তারা আগে টের পাননি। মাদকের করাল গ্রাস থেকে স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রী ও যুবসমাজকে রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।

এদিকে র‌্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় জনসাধারণের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এতে র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জন প্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণ।

ইতোমধ্যে কারাগারে আটক ইউপি সদস্য মনির হোসেন সজিব ও গ্রাম পুলিশ মো. ইব্রাহিমকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে। তাদেরকে বরখাস্তের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন। মনির চর রমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

তিনি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক। মনির জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেনের ভাগিনা। এছাড়া ইব্রাহিম একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ সদস্য ও আমির ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সক্রিয় কর্মী।

অপরদিকে, মনির হোসেন সজিবকে সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার অব্যাহতির চিঠিতে সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক টিটু চৌধুরীসহ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহাবুবুল হক মাহবুব ও ইসমাইল হোসেন সই করেছেন। তবে একই মামলায় গ্রেফতার যুবলীগ কর্মী আমির দলীয় কোনো পদ-পদবিতে নেই।

সুত্র জানায়, প্রথমে (৩ জানুয়ারি) মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে অভিযান চালিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের মধ্য চর রমনী গ্রাম থেকে ৮৫ হাজার ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ সময় গ্রেফতার কারা হয় চর রমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনির হোসেনসহ তিন জনকে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ইব্রাহিম একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ সদস্য ও আমির ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সক্রিয় কর্মী।

এ ঘটনায় বুধবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে সদর মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতারকৃত ৩ জনসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। র‌্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার (ডিএডি) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তীতে অন্য আসামিদের গ্রেফতারে সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে একই এলাকায় দ্বিতীয় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে র‌্যাবের করা মাদক মামলার পলাতক আসামি হাফিজ উল্যাহ বাহাদুর মাঝিকে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বাহাদুর পূর্ব চর রমনী মোহন গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে। উদ্ধারকৃত ইয়াবার বাজার মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

চর রমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল বলেন, গ্রেফতার মনির, ইব্রাহিম, আমির ও হাফিজ উল্যাহ খারাপ প্রকৃতির লোক। দীর্ঘদিন ধরে তারা মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল। এরমধ্যে মনির ইউপি সদস্য ও ইব্রাহিম গ্রাম পুলিশ সদস্য। তাদের গ্রেফতার করায় স্থানীয় জনসাধারলের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

গ্রেফতার মনির, ইব্রাহিম ও আমির হোসেনে এবং হাফিজ উল্যাহ বাহাদুর মাঝিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সম্প্রতি অভিযানে উদ্ধার হওয়া ইয়াবা গুলোই ছিল মাদকের সবচেয়ে বড় চালান।

র‍্যাব-১১ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, আইন-শৃঙ্খলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য র‍্যাব ফোর্সেস নিয়মিত ভাবে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। জঙ্গি, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন অপরাধীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‍্যাব-১১ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।এই অভিযানও তারই ধারাবাহিকতা নিয়মিত পরিচালনা হচ্ছে।

ডব্লিউজি/এমআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You