বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি আজ । বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এ মহান নেতার অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তাঁরা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর জাতি চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। তবে পরের বছরের ১০ জানুয়ারি বাঙালির রাখাল রাজা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই প্রকৃতপক্ষে এই বিজয় পূর্ণতা পায়। জাতির পিতা নিজেই তাঁর এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। এর আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে লাখ লাখ নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা চালায়। এমন প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই শুরু করার ডাক দেন।

স্বাধীনতা ঘোষণার পর দখলদার পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। অন্যদিকে, অবরুদ্ধ বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে, ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। কারাগারের যে সেলে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়।

আরেকদিকে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁকেই রাষ্ট্রপতি করে গঠিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে খ্যাত এ সরকারের নেতৃত্বে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা বাঙালি জাতি। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সে যুদ্ধে বহু ত্যাগ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয়ের লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।

এর আগে থেকেই কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশও বিশ্ববাসীর কাছে তার নেতার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানালে বিশ্বনেতারাও তাঁর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন। অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দেয়।

জাতির পিতা পাকিস্তান কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর বঙ্গবন্ধু সরাসরি অথবা টেলিফোনে কথা বলেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ অনেকের সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধু পর দিন ৯ জানুয়ারি ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে দেশের পথে যাত্রা করে ১০ জানুয়ারি সকালে নামেন ভারতের রাজধানীর দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ দেশটির মন্ত্রিসভা, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক নেতা, তিনবাহিনী প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতির পিতা। মুক্তিযুদ্ধে অকৃপণ সাহায্যের জন্য ভারত সরকার ও নেতাদের পাশাপাশি সে দেশের জনগণের কাছে তাঁদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন বঙ্গবন্ধু। গোটা জাতি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) পর্যন্ত পথে পথে তাঁকে স্বতঃস্ম্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু।

দিনের কর্মসূচি :আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ৭টায় জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সারাদেশে দল ও সহযোগী সংগঠন অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।

 

Recommended For You