ভোররাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, দুই কোটি টাকার ক্ষতি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ভয়াবহ আগুন লেগে ফুটপাতে থাকা নিক্সন মার্কেটের ৪৩ টি কাপড়ের দোকান ও একটি নতুন (৩ টনি) ট্রাক পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে শেষরাত্রি হওয়ায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টাকা হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর রাত ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে শহরের শহরের পোস্ট অফিস রোড পলি ক্লিনিকের সামনে ফুটপাতে থাকা নিক্সন মার্কেটের কাপড়ের ৪৩টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এসময় পাম্পে দাড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক আগুনে পুড়ে যায়।

অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকলবাহিনী। সেখানে তাঁদের ৩টি ইঞ্জিন প্রায় আড়াই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ও মৌলভীবাজার থেকে আগত ১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

পুড়ে যাওয়া দোকানের মালিক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এখানে খোলা বাজারে আমার কাপড়ের দোকান রয়েছে। এই দোকানের উপরই আমার সংসার চলে। আমার এবং আমার ভাইয়ের দুই সংসারই চলে এই দোকানের উপর। আমি কিস্তিতে টাকা এনে দোকান দিয়েছি। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার মাল ছিল, এগুলো ক্ষতি হয়েছে। এটা নিয়ে এখন আমি অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো আর কিভাবেই বা সংসার চালাবো।’

এদিকে একই স্থানের মেসার্স সামচ্ছু উদ্দিন এন্ড ব্রাদার্স ( যমুনা পেট্রোল পাম্প) এর ম্যানেজার আশু মিয়া জানান, ‘তাঁর পেট্রোল পাম্পের পিছন সাইট জ্বলে গেছে এবং সামনে দাড়িয়ে থাকা নতুন ক্রয় করা (৩ টনি) একটি ট্রাক জ্বলে গেছে। এতে তাঁর প্রায় ২৪ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’

পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল জব্বার আজাদ বলেন, ‘ফুটপাতের মার্কেটা পৌরসভার তত্ত্বাবধানেই। এখানে প্রায় ৩৬ টির মতো দোকান ছিল। গার্মেন্টসের মাল ছিল প্রত্যেকটা দোকানে। এখানে যারাই দোকানদারি করে তারা বিভিন্ন পাইকারি দোকান থেকে মালামাল বাকী নিয়ে এসে ব্যবসা করে। এঁরা ঐরকম বড় ব্যবসায়ী না। তবে প্রত্যেকটা দোকানেই দেড় হতে ২ লাখ টাকা বা তার উপর সমপরিমাণে মাল ছিল। এসব দোকানে আনুমানিক প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো মাল ছিল।বাকিটা হিসাব করলে বুঝা যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই ব্যবসায়ীগুলোর হয়তো একটা স্বপ্ন ছিল কিন্তু তাঁদের এই স্বপ্নটা আজ হারিয়ে ফেলছে। যেভাবে হোক তাঁদেরকে আমরা এবং বিভিন্ন পর্যায়ে সবার সাথে আলোচনা করে সহযোগিতা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবো। কিভাবে তাঁদেরকে দাঁড় করানো যায়।’

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন মৌলভীবাজার ৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, শ্রীমঙ্গল পৌর চেয়ারম্যান মহসিন মিয়া মধু, শ্রীমঙ্গল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সর্দার, ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ লিটন আহমেদ, নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত।

পরিদর্শন শেষে সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, ‘হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রায় ৩৬ টি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা অন্তত আমাদের সকলের জন্য দুঃখের বিষয়। এছাড়াও প্রচন্ড শীত সবকিছু মিলিয়েই, এমনি কাতর অবস্থায় মানুষ রয়েছে, তার মধ্যে এই দূর্ঘটনা। তবে আমি জানি না এই দূর্ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী। তবে অগ্নিসংযোগ হয় এই সময়টাতেই। সে হিসাবে এই অগ্নিকাণ্ড আমাদের কারোরই প্রত্যাশা ছিল না এবং কেউ অগ্নিকাণ্ড চায়ও না। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি’।

ডব্লিউজি/এআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You