ঢালিউডে শিশুতোষ সিনেমার সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। নির্মাতা-প্রযোজকদের এই সংক্রান্ত গল্প-ছবিতে আগ্রহ দেখা যায় না। তবে নিজের নির্মিত প্রথম সিনেমায় সেই সাহসটুকু দেখালেন আবু রায়হান জুয়েল। তার পরিচালিত ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ নির্মিত হয়েছে শিশুদের রোমাঞ্চকর অভিযানের গল্পে।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে সিনেমাটির ট্রেলার ও পোস্টার। ঢাকার মহিলা সমিতি মিলনায়নে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিনেমার শিল্পী-কুশলীরা মিলে পোস্টার-ট্রেলার উন্মোচন করেন।
এ সময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, চিলড্রেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজক মুনিরা মোর্শেদ মুন্নি প্রমুখ।
একদল শিশু সুন্দরবনে নৌবিহারে যায়। তাদের দেখাশোনার জন্য আছেন কয়েকজন বড় মানুষ। এই ভ্রমণে গিয়ে তাদের জাহাজ আটকা পড়ে, আক্রমণ করে ডাকাত। এসবের মাঝে সুন্দরবনের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ঘুরেবেড়ানো, আনন্দ-উল্লাস। সবকিছুরই আঁচ রয়েছে ২ মিনিট ৬ সেকেন্ডের এই ট্রেলারে।
শিশুতোষ চলচ্চিত্র হলেও এখানে প্রাধান্য পেয়েছেন পূর্ণ বয়ষ্ক চরিত্রে অভিনয় করা সিয়াম আহমেদ, পরীমণি ও আবু হুরায়রা তানভীর। তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব-প্রেমের রসায়নের কয়েক ছটাও ট্রেলারে তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে শিশুদের মুখে তেমন কোনও সংলাপ বা মজার কোনও দৃশ্য চোখে পড়েনি। তবে মূল সিনেমায় এই অপূর্ণতা থাকবে না, এমন প্রত্যাশা দর্শকের।
নিজের নির্মিত প্রথম সিনেমা নিয়ে আবু রায়হান জুয়েল বলেছেন, ‘এটি শিশুদের সুস্থ বিনোদনের জন্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র। তবে শুধু শিশুরাই নয়, সিনেমাটি সব বয়সী মানুষই দেখতে পারবেন। এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে আমরা মহামারি করোনার কবলে পড়েছিলাম। যার কারণে অনেক বিলম্ব হয়েছে। ওই সময়টাতে শিশুশিল্পীদের বাবা-মায়েরা আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
দেশের সিনেমা ইতিহাসে কালজয়ী হয়ে আছে ‘দীপু নাম্বার টু’। এই শিশুতোষ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি খুব এক্সাইটেড। কারণ বাচ্চাদের আরেকটা সিনেমা আসছে। শিশুতোষ সিনেমা তো তেমন হয় না। ২৬ বছর আগে আমি ‘দীপু নাম্বার টু’ বানিয়েছিলাম। সিনেমাটা নাকি এখনও অনেকের ভালো লাগে। আশা করি, সেই ভালো লাগাকে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছাপিয়ে যাবে।
এই সিনেমায় রাতুল চরিত্রে অভিনয় করছেন সিয়াম আহমেদ। অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য ছিলো এমন, “রাতুল চরিত্রটা আমার অনেক আগে থেকে জানা। সেই চরিত্রটা করতে পারবো, এটা কোনও দিন ভাবিনি। সেটাই হলো এবং এটা স্বপ্ন পূরণের মতো। আমি সিয়াম আহমেদ হয়ে গিয়েছিলাম, শিশুরা আমাকে রাতুল ভাইয়া করে ঢাকায় পাঠিয়েছে।
একমাত্র পুত্র রাজ্যকে নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন পরীমণি। তার ভাষ্য, ‘ছেলেকে নিয়ে এসেছি অনুষ্ঠানে। সিনেমাটাও দেখব। ও যখন বড় হবে, তখন দেখাব যে তোমার জন্য একটি উপহার এই সিনেমা। করোনার সময় মনে হয়েছিল, সিনেমাটা শেষ পর্যন্ত আসবে কিনা। এখন সিনেমাটা মুক্তি পাচ্ছে, সেটাই বড় পাওয়া।
উল্লেখ্য, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ নির্মিত হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাস ‘রাতুলের দিন রাতুলের রাত’ অবলম্বনে। সরকারি অনুদান পাওয়া এ সিনেমায় সিয়াম-পরী-তানভীর ছাড়াও অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, শহীদুল আলম সাচ্চু, কচি খন্দকার, আশীষ খন্দকারসহ একঝাঁক শিশু। আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।