সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নিয়ে অক্টোবর থেকে রাজনীতির মাঠ দখলের পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসাবে আগামী মাসে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শুরু করতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের ঢাকায় ডাক পড়ছে অক্টোবরে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠেয় দলের সম্ভাব্য বর্ধিত সভায় অংশ নিতে ডাকা হচ্ছে জেলা নেতাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভা আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলায় এমন পরিকল্পনা করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে দেশে ফিরলে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন এবং বর্ধিত সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্য পূরণে যে কোনো পরিস্থিতি এবার মাঠেই মোকাবিলা করবে দলটি। গড়ে তোলা হবে শক্ত প্রতিরোধ। হামলা হলে পালটা আঘাত। কেন্দ্র থেকে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি সমাবেশেও হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। এসব কর্মসূচিতে বাঁশের লাঠি ও পাইপের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়ে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশ চলাকালে আশপাশে ছিল তাদের সতর্ক পাহারা। তবে এখনই আগ বাড়িয়ে কোনো সংঘর্ষে জড়াবে না দলটি। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তারা আরও জানান, গত এক মাস ধরে সারা দেশের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন মার খেয়ে ঘরে ফিরছেন। প্রতিরোধ না করেও হয়েছেন মামলার আসামি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আস্থাহীনতা। যা ভবিষ্যৎ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এমন বার্তা যেতে পারে যে বিএনপির আন্দোলনের শক্তি নেই। তাই নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখা এবং সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের বিকল্প নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্নে সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। মামলা-হামলা গুমের মাধ্যমে দেশে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। যাতে কেউ সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদে রাজপথে নামতে না পারে। কিন্তু জনগণের দল হিসাবে বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এটা বন্ধে সরকার ও ক্ষমতাসীনরা অতীতের পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে রাজপথে নেমেছেন। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। এবার রাজপথেই হবে ফয়সালা। আর মাঠে থেকেই মোকাবিলা করা হবে যে কোনো পরিস্থিতি।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। উভয় দলই ঘোষণা দিয়েছে মাঠ দখলের।
ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে এর নমুনাও। জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে সারা দেশে বিএনপির প্রায় অর্থশতাধিক কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা ও মামলা এড়িয়ে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়ায় কোথাও বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি। অতি উৎসাহী হয়ে কোনো নেতাকর্মী যাতে সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা ছিল।
কিন্তু ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এসব কর্মসূচিতে ধারাবাহিক হামলা ভাবিয়ে তোলে বিএনপির হাইকমান্ডকে। হঠাৎ করে সরকারের কঠোর মনোভাব জানার চেষ্টা করেন তারা। সবকিছু পর্যালোচনা করে দলটির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে হামলা-মামলা করে বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে চায়। সরকারের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে তারা পালটা হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
কিন্তু রাজধানীর সমাবেশে হামলার পর সংঘাত এড়ানোর কৌশল থেকে সরে আসে বিএনপি। বিশেষ করে বনানীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তরুণ নেতা তাবিথ আওয়াল এবং কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর ওপর হামলার পর নীতিনির্ধারকরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মতামত নেন।