চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের সঙ্গে দেশটি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করতে পারে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন। বুধবার (৩১ আগস্ট) দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন জতিসংঘের বিদায়ী মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তিনি চীনের প্রতি বরাবরই নমনীয় বলে অভিযোগ রয়েছে সমালোচকদের। গত মে মাসে চীন সফরে গিয়েছিলেন মিশেল।
চীন শুরু থেকেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে জাতিসংঘের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল। তাদের দাবি, এটি পশ্চিমা শক্তিদের সাজানো ‘প্রহসন’ মাত্র।
জাতিসংঘের দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের সন্ত্রাস দমন এবং উগ্রবাদ-বিরোধী কৌশল প্রয়োগের প্রেক্ষাপটে জিনজিয়াংয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, উইঘুর এবং অন্যান্য প্রধানত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সদস্যদের স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আটকের পরিমাণ… আন্তর্জাতিক অপরাধের সামিল হতে পারে, বিশেষ করে মানবতার বিরুদ্ধে।
এ অবস্থায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কারাগার বা বন্দিশিবিরগুলোতে আটক সবাইকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চীনা সরকারে কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন জতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে পরিবার পরিকল্পনা নীতির জোরপূর্বক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রজনন অধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য ইঙ্গিত রয়েছে। তবে সরকারি তথ্যের অভাব এসব নীতির বর্তমান প্রয়োগের সম্পূর্ণ পরিমাণ ও প্রজনন অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন করে তুলেছে বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
অধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিমসহ প্রায় এক কোটি জাতিগত সংখ্যালঘুকে বন্দিশিবিরে আটকে জোরপূর্বক শ্রম আদায়সহ নান ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে বেইজিং। চীন সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে চীন। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন বলেছেন, বেইজিং বারবার এর বিরোধিতা করেছে। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
ঝ্যাং বলেন, আমরা সবাই জানি, তথাকথিত জিনজিয়াং ইস্যুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্পূর্ণ বানোয়াট মিথ্যা। এর উদ্দেশ্য অবশ্যই চীনের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা ও উন্নয়নে বাধা দেওয়া।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি না, প্রতিবেদনটি কারও কোনো উপকারে আসবে। এটি কেবল জাতিসংঘ ও একটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষতি করবে। গত মাসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চিঠি দিয়ে মিশেল ব্যাচেলেটকে জিনজিয়াং সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে চীন। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছেন, তিনি চিঠিটি পেয়েছেন এবং এতে আরও প্রায় ৪০টি দেশের সই ছিল। তবে এ ধরনের চাপে তার অফিস সাড়া দেবে না বলে জানিয়েছিলেন মিশেল।
ডব্লিউজি/এমএ