তিন মাসেই বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি দেয়া হলো তিনহাজার কোটি টাকা। এর আগে একই সময়ে ভর্তুকি দেয়া হলেছিল মাত্র অর্ধেক। অর্থ্যাৎ, ১৫শ’ কোটি টাকা। গত নভেম্বর-জানুয়ারি সময়কালে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি বাবদ দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা অর্থ বিভাগ কর্তৃক ছাড় করা হয়েছে। এবারই প্রথম চলতি অর্থবছর(২০২২-২০২৩) বাজেট থেকে এই অর্থ প্রদান করা হলো। এই নিয়ে গত ১২ মাসে(ফেব্রুয়ারি-২১ থেকে জানুয়ারি-২২) পর্যন্ত বিদ্যুতে ভর্তুকি অর্থ ছাড় করা হলো-১৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এই অর্থের অধিকাংশ দেয়া হয়েছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে। মূলত: ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে এই অর্থ দেয়া হয়।অর্থ বিভাগ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে, এই ভর্তুকির চাপ সামলানোর জন্য খুব শিগগিরই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চাচ্ছে সরকার। এই বৃদ্ধির কাজটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে হতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গেল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে আরও তিনহাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ভর্তুকির পরিমান ১২ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপরও এই সীমায় ভর্তুকি বেঁধে রাখা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস ওয়েলের দাম ৩০০ ভাগ বেড়েছে। আর এই ফার্নেস ওয়েলই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত দামে ফার্নেস ওয়েল কেনা হলেও সরকার কম দামে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করছে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকিও সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎখাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একই সাথে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে তাদের পিছনেও ভর্তুকির একটি বিশাল ব্যয় করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভর্তুকির চাপ সামলাতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতর দাম শতকরা ৫ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তবে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়বে। কারণ বিপণন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবে তা হয় না।
গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৬ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যায়ে গ্রাহক পর্যায়ে বেড়েছে ৯০ভাগ। বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সংকটে পড়েছে। এর জন্য প্রধানত সঠিক পরিকল্পনা না নেওয়াকে দায়ি করেছে বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ১৫২টি। সাধারণভাবে অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান “ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস” (আইইইএফএ) ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দেওয়া হয়। তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে দেশে দিনে রাতে মিলিয়ে ৩ থেকে ৫ ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে এই লোডশেডিং অবস্থা গ্রামে আরও খারাপ। দিনে রাতে মিলিয়ে গ্রামে অনেক জায়গায় ১৫-১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে ৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে নভেম্বর মাসের জন্য চাওয়া হয়েছে একহাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের জন্য একহাজার ৬২৩ কোটি টাকা। এবং জানুয়ারি মাসের জন্য চাওয়া হয়েছে দুইহাজার ২০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।
ডব্লিউজি/এমএ