সিরিজ বোমা হামলা: অনেক মামলা এখনও ঝুলছে নিম্ন আদালতে

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে দেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই হামলায় দুইজন নিহত ও অনেকেই আহত হয়েছিলেন।

সেদিন ৪৫০টি স্থানে পাঁচ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি’র সদস্যরা। এর মধ্যে ছিল- সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

পুলিশ সদরদপ্তর ও র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পরপরই সারাদেশে ১৫৯টি মামলা করা হয়। এরমধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে আটটি, আরএমপিতে চারটি, কেএমপিতে তিনটি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে সাতটি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে সাতটি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে আটটি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ছয়টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে তিনটি।

এ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচারকাজ শেষ হয়েছে ৯৭টির। বিচারাধীন ৪৬টি মামলা। মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছিল ২৪২ জনকে। অভিযোগপত্রের আসামি এক হাজার ১২১ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে অনেক মামলার বিচার এখনও নিম্ন আদালতে ঝুলে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় হাইকোর্টে আসা আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের বিষয়ে পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে বলে জানা গেছে।

নিম্ন আদালতে বিচার শেষ হওয়া ৯৭টি মামলার মধ্যে ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানসহ ২৭ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে আট জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

এছাড়াও বিচারিক আদালত থেকে ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি এবং ৩৫৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়। পরে সেসব রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করা হয়।

এদিকে সিরিজ বোমা হামলার পরপরই জঙ্গিদের ধরতে সারা দেশে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম (বাংলা ভাই), আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহসহ সাড়ে চারশ’ জঙ্গিকে।

জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর সংগঠনটির আমির হন মাওলানা সাঈদুর রহমান। দ্বিতীয় দফায় পুনর্গঠিত হতে থাকে জেএমবি। তবে তিনিও বেশিদিন গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকতে পারেনি। ২০১০ সালের ২৫ মে ঢাকা থেকে তাকেও গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

অপরদিকে সাঈদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার চার বছর পর ২০১৪ সালে আবারও জোরালোভাবে নিজেদের শক্তি জানান দেয় জেএমবি। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনতাই করে তারা।

এ সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮), রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ (৩৫) ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *