খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনতে কানাডাস্থ হাই কমিশনের বিবৃতি

জাতির পিতার ৪৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এক বিবৃতি দিয়েছে। এই বিবৃতিতে তারা বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীর কানাডায় আশ্রয় এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানো বিষয়ে আলোকপাত করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয় , ‘কানাডা বাংলাদেশের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম একটি দেশ। গত একান্ন বছর যাবত দুটি দেশ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক সাথে কাজ করে চলেছে। কিন্ত অতি পরিতাপের এই বিষয় যে, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের ১৮জন সদস্যের অন্যতম দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান খুনি নুর চৌধুরী বিগত ২৬ বছর ধরে কানাডার আশ্রিত রয়েছে।

তারপরেও আমরা সবাই জানি কানাডার সাথে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী তারিখে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমর্থন ও সহযোগিতা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের মধ্যে কানাডা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বন্ধু রাষ্ট্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কানাডার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, রেহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যু যেমন বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, জলবায়ু সঙ্কট, লিঙ্গ সমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি কানাডার সহযোগিতা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।’

তারা আরো বলেন যে,’২০২১ সালের পর থেকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হয়েছে এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে একটি বিমান পরিষেবা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার দ্বার প্রান্তে রয়েছে। ঢাকা ও টরেন্টোর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান এর সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে যাতে করে মানুষে মানুষে যোগাযোগ,ব্যবসা-বিনিয়োগের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।‘

এ সত্বেও , জঘন্য ও সাজাপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত না পাঠানোর বিষয়টা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে একটি অমীমাংসিত বিষয় হিসাবে বিরাজমান রয়েছে। কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন সাজাপ্রাপ্ত খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাব্য সকল বাধা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসায় বিশ্বাসী। হাইকমিশন জোড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে করে সম্ভাব্য সকল পর্যায়ে কিভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়া যায় এবং এই জঘন্য খুনির বিচারের রায় কার্যকর করে জাতির সবচেয়ে কলঙ্কজনক খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ঘায়। জঘন্যতম খুনি নুর চৌধুরীকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে হাইকমিশন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং অতি অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবেএটিকে চিনহিত করে সেভাবে কাজ করছে এবং কাজ করে যাবে যতক্ষন না পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে৷

এটি পরিস্কারভাবে বলা প্রয়োজন যে, হাইকমিশন জঘন্য ও সাজাপ্রাপ্ত খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে। হাইকমিশন কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে যাতে তাঁরা খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মানবিক ভুমিকা রাখেন এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, বিগত সরকারের আমল সমূহে কানাডা সরকার খুনি নুর চৌধুরীকে ফেরত দিতে চাইলেও তদানিন্তন সরকারসমূহ এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি বা আগ্রহ দেখায়নি।

পরিশেষে, হাইকমিশন কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশী সকল ভাই-বোনদেরকে খুনি নুর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য ও সামিল হবার।

ডব্লিউজি/এমএ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *