নওগাঁর আত্রাই জমি দখলের চেষ্টা, প্রতিপক্ষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর গ্রামের একটি পরিবার প্রায় দুই যুগ ধরে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভোগদখলীয় জমি জবরদখলের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র এই নির্যাতন করছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার। গতকাল সোমবার নওগাঁ ফ্রেন্ডস মিডিয়া হাউস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বুলবুল মৃধা নামে এক ব্যক্তি এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বুলবুল মৃধা বলেন, উপজেলার পাঁচুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় বাঁধের রাস্তার উত্তর পাশে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৬ শতাংশ জমি এবং পাউবোর অ্যাকোয়ার করা ৩৯ শতাংশ জমিতে বসতবাড়ি করে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। পাঁচুপুর গ্রামের সুখবর আলী প্রামানিক ভুয়া দলিল করে তাঁকে সেই বসতবাড়ি থেকে উঠিয়ে দিতে প্রায় দুই যুগ ধরে নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছে। গত ৩০ জুলাই সুখবর আলীর নির্দেশে পাঁচুপুর গ্রামের আয়েজ প্রামানিকের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক তাঁর বাড়ির পূর্ব দিকের বেড়া খুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বুলবুল বাধা দিলে আব্দুর রাজ্জাক তাঁকে মারধর করে এবং ওই জায়গা ছেড়ে না দিলে তাঁকে খুন করার হুমকি দেন। সুখবর আলী ও তাঁর লোকজনের ভয়ে তাঁর পরিবারের মেয়ে ও শিশুরা বের হতে পারছে না। প্রতিপক্ষের দ্বারা যে কোনো মূহূর্তে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতিপক্ষ সুখবর আলী ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি আইন, ১৯৯৮-এর ১০৭ ধারায় নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২ আগস্ট মামলা করেন। মামলায় প্রতিপক্ষগণের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন বুলবুল মৃধা। ওই আবেদনের ভিত্তিতে ওই দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম দরখাস্তকারীর শান্তিভঙ্গের আশঙ্কার কারণে কেন প্রতিপক্ষগণের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকার বন্ডে মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দেওয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে তাঁদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

বুলবুধ মৃধা আরও বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি ও পাউবোর অনুমতি নিয়ে বসবাস করে আসছি। আমার বসতবাড়ির মধ্যে পড়া পাউবোর ৮ শতাংশ জমি লিজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। কিন্তু ৬ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি ও পাউবোর জমিতে করা বসতবাড়ি ছাড়া আমার থাকার কোনো জায়গা নেই। এই অবস্থায় বসতবাড়ি থেকে প্রতিপক্ষের উচ্ছেদ চেষ্টায় আমি পরিবার নিয়ে গৃহহীন হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইতে সুখবর আলী বলেন, ‘বুলবুল মৃধা, তাঁর মা, বোনসহ ওই জমির ওয়ারিশভুক্ত সকলেই আমার নামে ওই জমি রেজিস্ট্রি করে দেন এবং ওই সম্পত্তির দখল বুঝে পাওয়ার পর সেখানে পুকুর ও আম বাগান করে ভোগদখল করে আসতেছি। থাকার জায়গা না থাকায় মানবিক কারণে আমার ক্রয় করা জমির একটি অংশে বুলবুল মৃধা ও তাঁর পরিবারকে বসবাস করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু বুলবুল এখন ওই জমি তাঁর নিজের বলে দাবি করছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মারপিট ও নির্যাতনের যে অভিযোগ সেটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান বলেন, পাঁচুপুরে বুলবুধ মৃধা ও সুখবর আলী নামে দুই ব্যক্তির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বসতবাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। জমি নিয়ে বিরোধ ঘিরে সেখানে যাতে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটে সে ব্যাপারে থানা পুলিশ সজাগ রয়েছে।

ডব্লিউজি/এমএ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *