জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারী মানবতার ঘৃণ্য শত্রুদের নির্মম-নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে শাহাদতবরণ করেন।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। এদিকে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, শেখ কামাল ছিলেন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনোবৃত্তির একজন মানুষ। দেশের খেলাধুলা ও সংস্কৃতি জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পড়াশোনা, সংগীতচর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টায় স্বাধীনতার পর শেখ কামাল বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নাট্যদল ‘ঢাকা থিয়েটার’ এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও নাট্যাঙ্গনে শেখ কামাল ছিলেন সুপরিচিত ক্রীড়া সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি (শেখ কামাল) দেশের ক্রীড়াজগতে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংগ্রামী, আদর্শবাদী কর্মী ছিলেন। তিনি ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার পূর্বমুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।
শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স শেষ করেন।
তিনি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেন। মানুষকে সমাজচেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে থিয়েটার আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির সংগঠক ছিলেন। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’।
তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনয় শিল্পী হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তার। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শেখ কামাল দেশে নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে শ্রম দিয়েছেন। তিনি নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ খ্যাতিপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
কর্মসূচি : দিনটি পালন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন সকাল ৮টায় ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহিদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে। সকাল পৌনে ৯টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে অনুষ্ঠিত হবে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে শস্য বীজ বিতরণ করবে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটি। বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ‘তারুণ্যের জেগে ওঠার নাম শেখ কামাল’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করবে আওয়ামী যুবলীগ। সকাল ১০টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিকাল ৫টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে মৎস্যজীবী লীগ। দিনটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করবে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটি। এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনে দল ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাত ১২টা এক মিনিটে ক্লাব ভবনে স্থাপিত তার প্রতিকৃতিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে মাল্যদান এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। এছাড়া দিনব্যাপী কুরআন তেলাওয়াত, বিকাল ৪টায় শেখ কামালের বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা ও স্মৃতিচারণ এবং বাদ আসর ক্লাব ভবনে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।