ভুল চিকিৎসায় শিশুর তিনটি আঙুল কাটার অভিযোগ

পাবনায় চিকিৎসার সময় অসাবধানতার কারণে এক বছরের শিশুর তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ শিশুটির বাবা জাহিদুল ইসলাম এ অভিযোগ তুলেছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও নার্সদের ব্যাপারে এমন অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

তিনি জানান, সঠিকভাবে ইনজেকশন পুশ না করায় এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তিনি।

জাহিদুল ইসলাম পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তার শিশু বাচ্চাটির নাম তাসিম মোল্লা।

বাবা জাহিদুল জানান, তার বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ১০ জুন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১২ জুন সকালে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসন নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তব্যরত নার্স আমার বাচ্চাকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশনটি রগে (রক্ত নালীতে) প্রয়োগ না করে সংশ্লিষ্ট পুরুষ নার্স মাংসপেশিতে প্রয়োগ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই বাচ্চার ডান হাত ফুলতে থাকে এবং বাচ্চা যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকেন।

কর্তব্যরত নার্সদের এবিষয়ে জানালে ঠিক হয়ে যাবে বলে শান্তনা দেন। এরপর দেখা যায় ইনজেকশন পুশকৃত স্থানে (ডান হাত) ক্রমান্বয়ে বেগুণী বর্ণ ধারণ করতে থাকে। এদিকে বাচ্চার চিৎকার বাড়তেই থাকে। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ক্ষত স্থানে বরফ দিতে বলেন এবং নাপা সিরাপ খাওয়াতে বলেন।

১৩ জুন কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি একটি মলম লিখে দেন। ১৪ জুন তারিখে কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি তার বাচ্চাকে শিশু ওয়ার্ডে রেফার্ড করে দেন। বাচ্চার ক্রমাগত কান্নায় তারা বারবার কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের শরণাপন্ন হন। তারা সবাই ঠিক হয়ে যাবে বলে এড়িয়ে যান।

১৮ জুন কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে চিকিৎসক শিশুকে রক্ত দিতে বলেন। তারা শিশুকে ১ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওই দিনই রাত ১২টার দিকে তারা শিশুসহ হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

২১ জুন হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কেটে চিকিৎসককে দেখালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শিশুকে আবারও রক্ত দিতে বলেন। সবাই বলেন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ বিষয়টির গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি  ৷

তিনি আরো জানান, ৪ জুলাই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরের কার্যালয়ে জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ জানাতে গেলে সেসময় তাকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার কক্ষে থাকা কয়েকজন তাকে হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত রোগী ভর্তির ফরমের মূল কপি রেখে ফটোকপি হাতে ধরিয়ে দেন।

এরপর বাচ্চাকে একজন চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান। সেই চিকিৎসক তাকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে (নিটর, ঢাকা) দেখানোর পরামর্শ দেন। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ৬ জুলাই শিশুটিকে ঢাকার শেরেবাংলার পঙ্গু হাসপাতালে দেখানো হয়। চিকিৎসকরা সার্জারির মাধ্যমে শিশুটির ডান হাতের ৩টি আঙুল কেটে ফেলতে বলেন।

চিকিৎসকেরা বলেন, অনেক বিলম্ব হওয়ার কারণে আঙুল কাটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

বাবা জাহিদুল আরো জানান, ঢাকার ক্লিনিক ব্যয়বহুল হওয়ায় তিনি পাবনায় চলে আসেন। এরপর গত ২৯ জুলাই পাবনার একটি বে-সরকারি হাসাপাতালে অপরেশনের মাধ্যমে তার সন্তানের ৩টি আঙুল কেটে ফেলা হয়।

বাচ্চার আঙুল কেটে ফেলার পর থেকে সে স্বাভাবিক আচরণ করছে।

এদিকে কর্তব্যরত নার্সরা এ অভিযোগ ভুল বলে মন্তব্য করেছেন। তারা জানিয়েছেন, নিয়মানুযায়ীই সেবা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কারণে এধরণের সমস্যা হতে পারে। এতে আমরা দায়ী নই।

এব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এছাড়া তদন্ত কমিটির তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

 

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *