স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মাটিতে ঘুমান কৃষক, ঘর নির্মাণে প্রতিপক্ষের বাধা

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা উত্তর হামছাদী ইউনিয়নে শ্যামগঞ্জ গ্রামে ঝরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী ও ৩ ছেলেমেয়েকে নিয়ে কৃষক বৃদ্ধ শিপন আহমেদকে মাটিতে ঘুমাতে হয়। আদালতে নির্দেশনা পেয়ে ঘর করতে গেলে প্রতিপক্ষ শামসুল ইসলাম শামছু তাদের মারধরসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়। শামছু ভাড়াটে লোকজন দিয়ে দু’বার কৃষক পরিবারের ওপর হামলা করে নির্মাধিন দেওয়াল ভেঙে দিয়েছে। বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কৃষক শিপন সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন।

শিপন শ্যামগঞ্জ গ্রামের আমির উদ্দিন মিঝি বাড়ির মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সালে কৃষক শিপন তার চাচাতো ভাই শামছুর কাছ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ঝরাজীর্ণ ঘরে শিপন তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। সারাক্ষণ ঘরটি ভেঙে পড়ার আতঙ্কে থাকে পরিবারটি। এতে শিপনের স্ত্রী বিবি খাদিজা বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা এনে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে পাকাভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। একই বছর ৩১ মার্চ হামলা চালিয়ে নির্মাণাধীণ ভবনের দেওয়াল ও কলাম ভাঙচুর করে শামছুর লোকজন। পরে নিজের জমি দাবি করে শামছুর অতিরক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা করেন। মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন।

এদিকে ঝরাজীর্ণ ঘরেই গত দুই বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শিপন মাটিতে বিছানা করে ঘুমাতে হচ্ছে। বাহিরে থেকে ঘরের ভেতর সব স্পষ্ট দেখা যায়। বৃষ্টিতে ঘরে চালা দিয়ে পানি পড়ে। খুব কষ্টে ঘরে বসবাস করছেন তিনি। এমন অবস্থায় ঘর নির্মাণের জন্য শিপন ইউএনও ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

শিপনের স্ত্রী বিবি খাদিজা বলেন, আমি বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে এখানে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করি। কিন্তু শামছু লোকজন দিয়ে তা ভেঙে দিয়েছি। বিবাহ উপযুক্ত দুই মেয়ে নিয়ে আমি ঝরাজীর্ণ ঘরে মাটিতে ঘুমাতে হচ্ছে।

কৃষক শিপন আহমেদ বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আদালতে মামলার রায় আমার পক্ষে আসে। এরপরও শামছু আমাকে ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। আমার নির্মাণাধীন দেওয়াল ও কলাম ভেঙে দিয়েছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ঝরাজীর্ণ ঘর দেখে স্বামীকে নিয়ে সে আসতে পারে না।

শামছুল ইসলামের বক্তব্য জানতে বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) বেলাল হোসেন বলেন, শামছু খারাপ প্রকৃতির লোক। সামাজিক ভাবে বৈঠকের সিদ্ধান্ত তিনি মানেন না। আদালতের নির্দেশনাও তিনি অমান্য করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ঘর নির্মাণের বাধা ও হামলার ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে কার্যকারী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *