খুলনার বৃক্ষমেলায় এক গাছের দাম দেড় লাখ টাকা!

গাছ মানুষ ও প্রকৃতির পরম বন্ধু, অক্সিজেনের একমাত্র উৎস, যা ছাড়া বেঁচে থাকাটাই কল্পনাতীত। কিন্তু এই অমূল্য সম্পদের উৎসের দাম যদি হয় আকাশচুম্বি! হ্যাঁ খুলনার বৃক্ষ মেলায় একটি বনসাই গাছের এরকম আকাশ ছোঁয়া দামই হাঁকা হয়েছে। দেড় লাখ টাকা দাম চাওয়া হয়েছে গাছটির, যার বয়স ৪৫ বছর।

করোনাকালে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর খুলনার সার্ক‌িট হাউজ ময়দানে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় অংশ নিয়েছে ৬০ টিরও বেশী স্টল। এর মধ্যে প্রত্যেকটা স্টলে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন দামের গাছ বিক্রি হলেও ব্যতিক্রম একটি স্টল খুলনা নিউমার্কেট নার্সারি। এর মালিক জাহাঙ্গীর আলম। এই স্টলে একটা বনসাই বট গাছের মূল্য ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা।

খুলনা নিউমার্কেট নার্সারির মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি একটি শিল্প। গাছটির উচ্চতা দুই ফুট ও বয়স ৪৫ বছর। এ ধরনের একটি গাছ তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। যথেষ্ট পরিচর্যা করতে হয়। এজন্য দামও বেশি। সারা বিশ্বে এ ধরনের গাছের প্রচণ্ড চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশেও তা দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়াও আমার স্টলে অ্যাডেনিয়াম, বকুল, কামিনী, হাই ব্রিড বট, মায়া বট, ফাইকাস, সাইটেন, জেড প্ল্যান্ট, জিনিয়া পাম, এরাবিকান, সিজিয়াম পাতা বাহার, আপেল, ন্যাসপতি, পিস ফল, রাম ভুটান, ডুরিয়ান, থাই সরিফা, অলিভ, অ্যাভোকাডোসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। যার প্রতিটির মূল্য ৫০ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।

কথায় আছে শখের তোলা আশি টাকা। কিন্তু শখের মূল্য লাখ টাকা হলেও এখনো এই দাম দিয়ে কেউ কেনেনি গাছটি। কংক্রিটের এই নাগরিক জীবনে সবুজের ছোঁয়া পেতে বারান্দায় টবে বা ছাদবাগান করার জন্য হয়ত কেউ কিনে নিয়ে যাবেন।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টলে সারি সারি সাজানো বনজ, ফলজ, সবজি ও ঔষধি দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির গাছ। পাওয়া যাচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।

মেলায় স্থান পাওয়া নানা প্রজাতির গাছ, থোকায় থোকায় ধরে থাকা চেনা-অচেনা ফল, প্রস্ফুটিত ফুলের সৌন্দর্য্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। বনজ, ফলদ, ওষুধি গাছ কিংবা ঘর সাজানোর অর্কিড, বনসাই-কী নেই মেলায়?

নানা বয়সী, শ্রেণি-পেশার ক্রেতাদের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে বৃক্ষমেলা। নাগরিক জীবন‌ের কোলাহল থেকে হারিয়ে যাওয়া সবুজ অরণ্য যেন মেলায় টানছে বৃক্ষপ্রেমীদের। ভ্যাপসা গরমে সকালের দিকে মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। এ সময় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলা থেকে যতটা না গাছ কিনছেন তার চেয়ে বেশি ঘুরে দেখছেন। কারো পছন্দ হলে গাছ কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, বৃক্ষমেলায় দর্শনার্থীরা ঘুরেঘুরে দেখছেন, ভিডিও করছেন, ছবি তুলছেন। সেলফি তো আছেই। বিকেল গড়াতেই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তান নিয়ে আসছেন, গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। অফিস শেষে গাছপ্রেমীরা ঘুরে যাচ্ছেন মেলা থেকে, কিনছেন তাঁদের পছন্দের গাছ। ছুটির দিনগুলোতে থাকছে উপচেপড়া ভিড়। বিকিকিনি হচ্ছে নানা জাতের গাছের চারা। বৃক্ষমেলার স্টলে গাছের পরিচর্যা করছেন কর্মীরা। এবারের মেলায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান স্টল মালিক ও বিক্রেতারা।

খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি এসএম বদরুল আলম রয়েল বলেন, মেলায় নার্সারী মালিক সমিতি ও সরকারি স্টল আছে। আমাদের এখানে ফলজ, বনজ, ঔষধি সবধরনের গাছ রয়েছে। এছাড়া বর্তমান সময়ে ছাদ বাগানের জন্য স্পেশাল কিছু স্টল আছে। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই সবাই বৃক্ষমেলার মাঠে আসেন। মেলা উপভোগ করুন এবং সবুজের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য সকলের আমন্ত্রণ রইলো।

খুলনার বৃক্ষমেলায় পড়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। সেইসঙ্গে সময় স্বল্পতাও ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে। এ জন্য মেলার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন নার্সারী মালিক সমিতির নেতারা।

সুন্দরবন পশ্চিমের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ১৫দিন ব্যাপি বৃক্ষমেলা চলছে। মানুষ মেলায় আসছে, বেচা-কেনাও ভালো। বৃষ্টি হলে গাছের বিক্রি আরও বেড়ে যেতো।

ব্যবসায়ীদের মেলার মেয়াদ বাড়ানোর দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত কোন আবেদন আমরা পায়নি। তবে লিখিত আবেদন করা হলে বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হবে। আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গত ২২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই মেলা আগামী ০৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত ।

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *