দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ॥ ভোটাররা নীরব

আগামী ২৭ জুলাই দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। প্রার্থীদের তৎপরতা আর ভোটারের পর্যবেক্ষন প্রায় চুড়ান্ত। পিনপতন নীরবতা পালন করছেন ভোটাররা। নীরব ভোটের বিপ্লব ঘটবে নির্বাচনী ফলাফলে। তাই ক্যালকুলেটরে হিসাব মিলানো খুব কঠিন রাজনৈতিক গণিতবিদদের। তবে রাজনৈতিক তৎপরতায় মনে হয় পরীসংখ্যান খুব বেশি সহজ না। শেষ পর্যন্ত জনতার উপস্থিতিতেই মজলিশের আয়োজন হবে। খুশি থাকবেন দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার জনসাধারণ ও ভোটাররা।

জানা গেছে, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার নির্র্বাচনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুলাই। ইভিএম পদ্ধতীতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষনার পরেও তিন দফায় নির্বাচন পেছাতে বাধ্য করেছে নির্বাচন কমিশন। সর্ব শেষ তারিখ ২৭ জুলাই। দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজার ১৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৬৮৫ জন। নারী ভোটার ১৫ হাজার ৪৪৭ জন।

মেয়র পদে ৫ জন, কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৮ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। মেয়র পদে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি ইসতিয়াখ হোসেন দিদারের স্ত্রী ফারিন হোসেন, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ(মোবাইল ফোন), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র শেখ নুর নবী অপুু (জগ), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ(নারিকেল গাছ) ও বিএনপির দলীয় প্রার্থী সাদেক আকতার নিয়াজি(ধানের শীষ)। দেওয়ানগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সাথে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ৩ জন। বিএনপির একক প্রার্থী সাদেক আকতার নিয়াজি(ধানের শীষ)। শতচেষ্টা করেও আওয়ামীলীগ তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীর লম্বা তালিকা সামাল করতে পারেনি। তাই হিসাব করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আওয়ামীলীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালিন ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি। ফলে বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্র্থীর কাছে হেরে গেছেন। এছাড়াও আবুল কালাম আজাদ আওয়ামীলীগের নিস্ক্রীয় বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ সরকারি কর্মকর্তার উপর হামলা ও মাদকসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর ভোটারদের কাছে তার ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামীলীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র শেখ নূর নবী অপু উপ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ১৮ মাস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অপুর কর্মকান্ডের হিসাব নিকাশও লাইম লাইটে চলে এসেছে ভোটারদের সামনে। বায়নোকুলার দিয়ে ভোটাররা শেখ নূর নবী অপুর মেয়াদকাল পর্যবেক্ষন করছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ফারিন হোসেনের মেরুদন্ড অনেকটা দুর্বল। এ কারণে শিক্ষানুরাগি ফারিন হোসেন ভোটারদের কাছে নানা প্রশ্নের সন্মুখীন হচ্ছেন। প্রত্যাশানুযায়ি শতভাগ দলীয় স্থানীয় নেতা কর্মীর সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সহযোগিতার ঘাটতি নেই। বর্তমান সময় থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত জেলা নেতাদের আর্শিবাদ থাকলে খুশির খবর পেতে পারেন ফারিন হোসেন। নচেৎ উল্টো খবরের ক্ষুদে বার্তা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ূমের লোকজনও গ্রুপ ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতীককে প্রধান্য দিয়ে গ্রুপ ভাইরাস দুর্বল হলে ধানের শীষের প্রার্থী সাদেক আকতার নিয়াজির পক্ষেও দুর্বলতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। তবে বিএনপির গ্রুপ ভাইরাস খুব নীরব। শব্দবিহীন অবস্থায় বিরাজ করছে। তাই শনাক্ত করা কঠিন।

এব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক দেওয়ানগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজাইল করিম (এলান) জানান, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ভোটাররা অনেক সচেতন। অতীতের হিসাব ভোটাররা মনে রেখেছেন। ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে হিসাব মিলিয়ে ভোট দিবেন। অদক্ষ ও জনবিচ্ছিন্ন কোন ব্যাক্তিকে ভোট দিয়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করবে না।

এব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ পৌর সভার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ফারিন হোসেন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরেও আমি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বর্তমান অবস্থা ভোটের দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকলে নৌকার জয় নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়নে ভোটাররা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র শেখ নূর নবী অপু জানান, আমি মেয়র থাকাকালিন দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা এখনও দৃশ্যমান। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি ভোটারদের কাছে প্রত্যাশানুযায়ি সর্মথন আশা করছি। ভোটের মালিকরা ভোট দিতে পারলে প্রত্যাশানুযায়ি ফলাফল পাবো ইনশাআল্লাহ।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ জানান, ক্ষমতায় থাকাকালিনও আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। বর্তমানেও একই অবস্থা চলমান। তবে জগনের সমর্থন পেলে সব সত্য প্রকাশ পাবে। নারিকেল গাছ জয়ী হবে। বিএনপির একক প্রার্থী সাদেক আকতার নিয়াজি জানান, আওয়ামীলীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির ঘাটি। তাই শান্তিপূর্ণ ভোট হলে অবশ্যই ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

ডব্লিউজি/এমএ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *