রেললাইনের দুই ধারে আব্দুল কাদেরের আনারস বিপ্লব

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে রেল লাইনের দুই ধারে পতিত জমিতে আনার কলি জাতের আনারস চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন মৎস্যচাষী ও কৃষক আব্দুল কাদের (৭০)।

আব্দুল কাদের উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের লাল ব্রীজ এলাকার মুসরীত দোলজোড় গ্রামের মৃত আবেদ আলী ছেলে। তার দুই সংসারে ৭ ছেলে ৬ মেয়ে তার।আব্দুল কাদের (৭০) ছোট থেকেই কৃষিকাজের উপরে অধিক আগ্রহ ছিল তার। ১৯৯৯ সালে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে আনার কলি জাতের আনারস দুইটির চারা থেকে হাজারও চারা তৈরি করেন তিনি।

জানা গেছে, আব্দুল কাদের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় পাকিস্তান বাহিনীর সাথে যুদ্ধ বেধে যায়। এর পর ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে শিলিগুড়ি এলাকায় ট্রেনিং যান। সেখানে আনারসের বাগানের ভিতর প্রায় তিন মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে থেকে আনারস চাষের উপরে তার আগ্রহ জন্মায়। এরপর দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আসেন। এরপর শুরু করেন কৃষিকাজ। তার ১৪ একর এবং ২ একর জমিতে বিশাল দুইটি মাছের খামার রয়েছে। তিনি একজন সফল উদ্দোক্তা। ১৯৮৭ সালে লালমনিরহাট জেলায় তিনি মাছ চাষ করে সফল উদ্যোক্তার হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। তার একটি বিশাল বাগানে ৪০ প্রকারের ফলের গাছ রয়েছন। এবছর রেলের দুই ধারে পতিত জমিতে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেন।

প্রতিবছর আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেন আনারকলি আনারস।আব্দুল কাদের জানান ,১৯৯৯ সালে ভারতের শিলিগুরি আনার কলি জাতে আনারস নিয়ে বন্ধু হরি বেড়াতে আসেন কৃষক আব্দুল কাদেরের বাড়িতে। সেই আনারস খেয়ে বাড়িতে রোপন করেন আনারসের কান্ড। সেই গাছ বড় হয়ে ফল দিলে অবাক হন তিনি। বাড়াতেই থাকেন আনারসের চারা। সেই থেকে বাড়িতেই আনারস চাষ শুরু হয় কৃষক আব্দুল কাদেরের। স্বপ্ন দেখেন বাণিজ্যিক ভাবে আনারস চাষাবাদের। কিন্তু উপযোগী জমি ছিল না। এর পর লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেল লাইনের পতিত ঢালু জমিতে ২০০৮ সালে আনারস চাষের উদ্যোগ গ্রহন করেন। বাড়িতে লাগানো আনার কলি জাতের আনারসের চারা পরীক্ষা মুলক রেল লাইনের দুইধারে রোপন করেন। বেশ সুফল পেয়ে প্রতিবছর রেল লাইনের ধারেই বাড়তে থাকে আনারসের বাগান। আব্দুল কাদেরের বাগানে ফলেছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন পর্যন্ত। তবে ওজন যাই হোক স্বাদে কমতি নেই।

তিনি আরও বলেন, ক্ষেত থেকে নগদে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে-৪০ টাকা প্রতি পিচ। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা আনারস বিক্রি করেছেন। এ ছাড়াও আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের স্বাদ গ্রহনে জন্য ফ্রিতে দেওয়া হয়েছে। রেললাইনের দুই ধারে প্রায় সাত থেকে আট হাজার চারা রোপন করা হয়। রেল কর্তৃপক্ষ অনুমতি আর সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত পুরো রেললাইনে আনারসের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, ভারতের শিলিগুড়িতে প্রায় তিন মাস মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়েছি কিন্তু আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি। ২০১৪ সালে অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধার জন্য আবেদন করেছি তারও খবর নেই।

প্রতিবেশি বীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কৃষক আব্দুল কাদের একজন সফল কৃষক। তার অনেক বাগান রয়েছে। পাশাপাশি তার ১৬ একর জমিতে তার মৎস্য খামার রয়েছে। প্রতিবছর মাছ ও বাগানের ফলমূল বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করেন। আদিতমারী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, কৃষক আব্দুল কাদের রেলের দুই ধারের পতিত জমিতে আনারস লাগিয়ে লাভবান হয়েছেন। তার ব্যতিক্রম উদ্যোগে কৃষি অফিস থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। আমাদের কৃষি উপ-সহকারি অফিসারা তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি জেলার অন্যান্য কৃষকদের আমরা পতিত জমিতে আদা, রসুন হলুদ,লাগানোর উৎসব প্রদান করছি।

লালমনিহাট কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, রেললাইনের দুই ধারে পতিত জমিতে আনারস চাষ করেছেন একজন কৃষক বিষয়টি জেনেছি। তার এমন কাজে জেলার অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহের প্রেরণা যোগাবে। তার বিষয়ে আমাদের আদিতমারী কৃষি অফিসার বেশি জানবেন।

লালমনিরহট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, রেললাইনের দু’ধারে ৫ থেকে ১০ ফুটের মধ্যে বনবিভাগ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেকোনো জিনিস লাগালে সেটি অবৈধ। সাধারণত আমরা এই পতিত জমি কাউকে লিজ দিই না। এটি রেলের সংরক্ষিত জায়গা। যে কৃষক আনারস লাগিয়েছেন সেটি অবৈধভাবে লাগিয়েছেন। রেলের পতিত জায়গায় বন বিভাগের সঙ্গে আমাদের গাছ লাগানোর চুক্তি হয়েছে।

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *