শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সফল উদ্যোক্তা শিরিন

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে কুমিল্লার, লাকসাম উপজেলার শিরিন মন্ডল। শত বাধা পেরিয়ে এই অধ্যম্য মেধাবী ছুটে চলছেন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে । শারীরিকভাবে নিজে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েও প্রায় তিন শতাধীক নারীকে দিয়েছেন সেলাই প্রশিক্ষণ । পাশা-পাশি মাত্র ২৫ বছর বয়সে আয় করেছেন ৩০ লক্ষ টাকা ।

ছোট বেলায় জ্বরে ভুগে, প্যরালাইজড্ হয়ে যায় দুই পা । চলাচলের ক্ষমতা হারালেও হারায়নি মনবল । নিজের মেধা, আত্নবিশ্বাস আর হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শুরু করেন নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার যুদ্ধ ।

বাকি গল্পটুকু জানুন তাঁর নিজের হাতে লেখা থেকেই -(তার লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো )

আমার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প★
আমি অনলাইনে খুব বেশি দিন না, মাত্র ১ বছর নিজের ক্রিয়েটিব কিছু কাজ নিয়ে অনলাইনে যাত্রা করি শখের বশে।
বাস্তবিক অর্থে একজন উদ্যোক্তা বলতে যা বুঝায় তা হলো নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে ক্রিয়েটিব গুন দিয়ে নতুন করে নিজেকে প্রতিষ্টা করা।
আর আমার উদ্যোক্তা জিবন সেভাবেই শুরু করেছিলাম, তখন আমি অনেক ছোট মাত্র ৫ম শ্রেনীতে পড়ি।
আমি একজন হুইলচেয়ার ইউজার ছোট বেলায় টাইফয়েড জ্বর থেকে পায়ে সমস্যা তখন থেকেই প্যরালাইজ্ড।
স্টুডেন্ট হিসেবে মোটামুটি ভালো ছিলাম। সব সময় প্লেসের ছাত্রী ছিলাম।
বাসায় পড়াশোনা করতাম স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করা হত না। টিচার গন আমাকে অনেক ভালোবাসতেন অট হাজিরা দিয়ে দিতেন। শুধু সেমিস্টার পরিক্ষা দিতে স্কুলে / কলেজে যেতাম।
তাই বাসায় সময় পেতাম অনেক বেশি, সেলাই, ও নকসি কাথার আর্ট শিখেছিলাম নিজের উদ্যোগেই।
তখন থেকেই শুরু করি উদ্যোক্তা জীবন।
তখন থেকে ৩০০+ মেয়েকে সেলাই প্রশিক্ষন দিয়েছি ধাপে ধাপে।
তাদের নিয়ে নিজের রুমেই দর্জির কাজ করে মাত্র ২৫ বছর বয়সে আমি ৩০ লক্ষ টাকা উপার্জন করি নিজের ঘরে বসে।
কাজ ভালো হওয়ায়, অনেক দুরথেকে কাষ্টমার রা কাপড় নিয়ে আমার বাসায় আসত। একজনের কাছে শুনে আরেকজন আসত এভাবে অনেক মানুষ আসত।
আমার মত ৫ ম শ্রেনিতে পড়া একজন পিচ্ছি মেয়ের কাছে কাপড় দিতে ভয় পেত যদি নষ্ট করে ফেলি।
আল্লাহর রহমতে আমি কখনো তাদের হতাশ করি নি।
পরবর্তিতে।
আমার করা কিছু বেবি আইটেম নিয়ে বন্ধু বান্ধবদের উৎসাহে অনলাইনে কাজ করার ইচ্ছে হয়।
কিন্তু নিজের উপার্জনের টাকা কোন সেভিং না করে সংসারে খরচ করে ফেলায়। কখনো শখের কিছু কেনা হয় নি। এমনকি একটা মোবাইল ও আমার ছিল না।
বাসার, পাশের বাসার সবার মোবাইল নিয়ে একটা ফেসবুক আইডি খোলা ছিল তা লগইনকরে করে পোস্ট দিতাম।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো সারা পেয়েছি।
তারপর একটা স্মার্টফোন নিলাম নিজ উদ্যোগের টাকায়।
এবং আরো ভালোবাবে কাজশুরু করলাম।আলহামদুলিল্লাহ অনেক পরিচিতি পেয়েছি।কিন্তু এখন আমার শারীরিক কিছু সিরিয়াস সমস্যা জনিত কারণে ডাক্তারের পরামর্শ সেলাই কাজ করা যাবে না।
তবে আমি কারো বোঝা হয়ে বসে খেতে কখনো পছন্দ করি না চেষ্টা করি নিজে পরিশ্রম করে কিছু উপার্জন করার। আমি বর্তমানে শাড়ি, থ্রিপিছ, পান্জাবি, বেডসীড ও বোরখা নিয়ে কাজ করছি।
চেষ্টা করেছি খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে আমার জীবনের গল্প কিছুটা তুলে ধরতে। তেমন একটা গুছিয়ে লিখতে পারি নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *