মাওয়া-জাজিরার দুই পারকে সোয়া ছয় কিলোমিটারের পদ্মা সেতু যুক্ত করেছে ৪১টি স্প্যান দিয়ে। যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য দেড়শ মিটার করে। ৪২টি খুঁটির ওপর দাঁড়ানো মূল সেতুর আবার প্রতিটি খুঁটির নিচে আছে ছয়টি করে পাইল। যাদের একেকটির গভীরতা ১২৮ মিটার বা ৪২০ ফুট।
ইস্পাতের কাঠামোর ওপর কংক্রিটের ঢালাইয়ের এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ বা সোয়া ১২ হাজার কোটি টাকা লেগেছে কেবল মূল সেতু বানাতেই। এছাড়া মাওয়া ও জাজিরায় নদীর দুই পারকে বাঁধাই করতে খরচ গেছে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা, যাকে কারিগরি ভাষায় বলা হচ্ছে নদীশাসন। সেটিও মোট ব্যয়ের ৩১ শতাংশ। বাকি টাকা লেগেছে জমি কেনা, সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, পরামর্শকসহ অন্যান্য খাতে। এই সেতুর দুই পারে রোড ভায়াডাক্ট বা মূল সড়কের সঙ্গে সেতুকে মেলানোর জন্য উড়ালপথ আছে তিন কিলোমিটারের কিছু বেশি। আর সংযোগ সড়ক ১২ কিলোমিটার, যার বেশিরভাগই জাজিরার দিকে। ১৪ কিলোমিটার নদীশাসনেরও প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার পড়েছে জাজিরা পারে।
এই সেতুর মূল প্রস্ত ২২ মিটার। কিন্তু তার চেয়ে দুই দিকে আড়াই মিটার করে আলাদা রাখা হয়েছে সার্ভিস লেন বা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহারের জন্য। বাকি ১৭ মিটারে, দুই দিকে দুই লেন করে মোট চার লেনে চলবে যানবাহন।
অন্যদিকে নিচের তলায় স্থাপিত একই লাইনে থাকবে ব্রড ও মিটার গেজে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা। যেখান দিয়ে দৈনিক ৭০ বার রেল যাওয়া-আসার সক্ষমতা রয়েছে। রেলের ডেক থেকে সড়ক অংশের উচ্চতা সাড়ে ১৩ মিটার। আর নদী থেকে সেতুর উচ্চতা সোয়া ১৮ মিটার বা ৬০ ফুট।
রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় এই সেতুতে ব্যবহৃত হয়েছে ১০ হাজার টন ক্ষমতার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং। যা আগে কখনো এ ধরনের স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার আল্ট্রাফাইন সিমেন্ট এই প্রকল্পের শক্তি বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। নদীশাসনে ব্যবহৃত প্রতি এক টন ওজনের পাথর এসেছে ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে। এছাড়া পাইলিংয়ের জন্য ২৫ হাজার ক্ষমতায় বিশেষায়িত হ্যামার, স্প্যান তুলতে ৩২০০ টন ক্ষমতার ক্রেন সবই তৈরি হয়েছে কেবল এই প্রকল্পের জন্য। আর সার্বিক দৈর্ঘ্যের বিচারে এটি এখন বিশ্বের ১১তম সেতু।
ডব্লিউজি/এমএ