বিশ্বের অন্য সেতুর চেয়ে আলাদা কেন পদ্মাসেতু?

পদ্মা সেতু নানা কারণে বিশ্বের অন্যান্য সেতুর চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রথম দ্বিতল সেতু। ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি ও নিচ দিয়ে রেল (ডাবল স্ট্যাক কনটেইনার লোড) চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। আনপ্রেডিক্টেবল পদ্মা নদীতে এ সেতু নির্মাণই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আমাজনের পরই খরস্রোতা নদী হিসাবে পদ্মা বিবেচিত। এ নদীতে সেতু নির্মাণ সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া এ সেতুর পাইল স্থাপন প্রক্রিয়া, পাইলের গভীরতা, নদীশাসন, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন এবং পরিবেশ ঠিক রাখতে বৃক্ষরোপণসহ নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ওই এলাকায় ‘পদ্মা সেতু বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সেতু বিভাগ এ সেতুকে বিশ্বের ‘মোস্ট কমপ্লেক্স সেতু প্রকল্প’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এ সেতুর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রসঙ্গত, মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।

আরও জানা গেছে, পদ্মা নদী ভাঙনপ্রবণ ও খরস্রোতা হওয়ার কারণে এ সেতুর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পিলার ও পাইল বসানোর ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে; তা বিশ্বে প্রথম। এ সেতুতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১২২ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত পাইল বসানো হয়েছে; যা ৪০ তলা বিশিষ্ট ভবনের সমান। অর্থাৎ এসব পাইল নদীর পানি ভেদ করে কাটামাটির ১২২ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ঠেকেছে। তবে কিছু পাইলের গভীরতা ৯৮ মিটার থেকে বিভিন্ন আকারের রয়েছে। প্রতিটি পিলারের ডায়ামিটার তিন মিটার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় সেতুর পাইল নির্মাণে কয়েকবার ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, পদ্মা নদীর স্রোতের তীব্রতা প্রতি সেকেন্ডে ৩ থেকে সাড়ে ৪ মিটার। নদীর প্রবাহমাত্রা প্রতি সেকেন্ডে দেড় লাখ ঘনমিটার।

নদীর তলদেশে স্রোতে ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যায়। নদীর এমন আচরণ সহনীয় ফাউন্ডেশনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। নদীর তলদেশের মাটি নরম হওয়ায় ওইসব স্থানের ২২টি পিলারের নতুন ডিজাইন করা হয়। এর মধ্যে ১১টি পিলারের নিচে সাতটি করে পাইল দেওয়া হয়। বাকি ১১টির নিচে ‘স্কিন গ্রাউন্টিং’ পদ্ধতিতে সাতটি করে পাইল রয়েছে। সেতুসশ্লিষ্টরা জানান, স্কিন গ্রাউটেড এমন পদ্ধতি, যেখানে পাইলে খাঁজকাটা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে মিহি দানার সিমেন্ট। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে নদীর তলদেশের নরম মাটির সঙ্গে উপকরণ মিলে শক্ত ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। এ সেতুতে চার হাজার টন সক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ ধাক্কা দিলেও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

ডব্লিউজি/এমএ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *