ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে তিস্তার পানি হ্রাস বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।টানা বৃষ্টিতে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় জেলায় পানি বন্দি হয়ে পরেছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার।এদিকে জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতেও পানি না কমায় ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ।
রোববার (১৯ জুন) সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপদসীমার ৫)১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফের দুপুর ১২ টায় পানি কমে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে এবং বিকেল ৩ টায় বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সে. মি ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে।তিস্তা ও ধরলার পাশাপাশি সোতি নদী,মালদাহ,রত্নাই,স্বর্ণামতিসহ সব নদী ও ডোবার পানি হ্রাস বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি ও জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,দোয়ানী,ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি,আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ,রাজপুর,গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৫ হাজার পরিবার এবং অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর, ভবন,পানির পথ রোধ করে মৎস প্রজেক্ট,ডোবার পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পরেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান,পানিবন্দি পরিবারগুলোকে প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান গতরাত থেকে তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে অত্র ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ফকির পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন জানান,গত দুইদিন ধরে প্রায় ১ শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া হয়নি। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন,উজানের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোববার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার তীরবর্তী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। গত দুইদিন থেকে তিস্তার পানি ঘর বাড়িতে প্রবেশ করায় পরিবারগুলো রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে কোনরকম রান্না করে এক বেলা খেয়ে জীবন যাপন করছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, বন্যা কবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার তা বিতরণ শেষ হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত শনিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, হাতীবান্ধা উপজেলার নির্মাণাধীন দোয়ানী গাইড বাঁধ ও তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস সহ গত আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চলমান একাধিক কাজ পরিদর্শন করেছেন।
ডব্লিউজি/এএইচ