নদী ভাঙনে হুমকির মুখে ৭১-এর বধ্যভূমি

উজানের ঢল আর কয়েক দিনের টানাবৃষ্টিতে স্বর্ণামতি নদীর পানি বেড়ে নদীতীরে অবস্থিত ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের বহুল আলোচিত কান্তেশ্বর বধ্যভূমিটি নদীভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। লালমনিরহাটের আদতমারী উপজেলার (বুড়িমারী রেল রুটের লালব্রিজ সংলগ্ন) জেলার কান্তেশ্বর পাড়া এলাকায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ঘাঁটি করে পাকিস্তানি সেনারা। ওই এলাকায় ঘাঁটি করা এবং নির্বিচারে নিরীহ বাঙালিদের হত্যাকাণ্ড চালানোর বিষয়টি হৃদয়বিদারক।

পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ওই সময় ট্রেনে করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাঙালিদের ওপর চালাত বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাযজ্ঞ। এ কারণে এলাকার দামাল ছেলেরা একত্র হয়ে লালব্রিজ থেকে শুরু করে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার রেললাইন তুলে ফেললে বাধাগ্রস্ত হয় তাদের পথচলা। এ কারণে পাক সেনারা সেখানে স্থায়ী ক্যাম্প বানিয়ে ওই এলাকার মুক্তিকামী মানুষের ধরে এনে গুলি চালিয়ে হত্যা করে পাশের একটি বাঁশঝাড়ের কাছে গর্তে ফেলে দিত।

এছাড়া ধরে আনা লোকজনদের দিয়ে তাদের বাড়িতে থাকা যুবতী ও নারীদের নিয়ে এসে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেও ফেলে দিত ওই গর্তে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধকালীন সময়ের শুরুতেই ২৭ মার্চ একদিনে তারা ৫২ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে তারা ওই গর্তে ফেলে রেখেছিল। এসব তথ্য সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় শহীদদের স্মরণে ওই বধ্যভূমিটি পাকা করা হয়। ধীরে ধীরে গত ৫/৭ বছরের ভাঙনে এখন বধ্যভূমির কাছেই চলে এসেছে স্বর্ণামতি নদী। টানা বৃষ্টিতে হুমকির মুখে এখন বধ্যভূমিটি। পানির তোড়ে স্থাপনার দক্ষিণে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ভাঙনের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। যে কোনো সময় এটি নদীগর্ভে বিলীন হলে হারিয়ে যেতে বসেছে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিগাথা। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে পাশের একটি মন্দিরও।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর এ বিষয়ে জানান, যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি দ্রুতই সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *