সিলেটে ১০ কিলোমিটার নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা!

সিলেটে টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। ইতিমধ্যেই বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল। প্রায় ২৪ বছর পর আবারও এমন বন্যা দেখতে পেল সিলেটবাসী। এমন কঠিন মুহুর্তে দেশবাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে বন্যায় আটকে পড়া সাধারণ মানুষ।

তবে এই বিপদের মাঝেও কিছু অসাধু মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের কুৎসিত খেলায় মেতেছেন। গ্রামীন প্রবাদ ‘মরার উপরে খাড়ার ঘা’-এর মতো। বন্যার কবল থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ। এজন্য তাদের একমাত্র বাহন এখন নৌকা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কয়েকগুন বেশি নৌকা ভাড়ায় আদায় করছে কিছু অসাধু মানুষজন। নৌকা দিয়ে ১০ কিলোমিটার পার হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ভূক্তভোগীরা।

কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখালের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ১০ কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

তেলিখালে গ্রামের বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা অসুস্থ স্ত্রীকে আনতে সালুটিকরে নৌকা ভাড়া করতে আসেন মারুফ আহমদ। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে একমাত্র ভরসা নৌকা, কিন্তু এই নৌকাই এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। মারুফ বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি সিলেট শহরে থাকি। বাড়িতে আমার অন্তঃসত্ত্বা পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাকে আনার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করতে এসেছিলাম, কিন্তু ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো নৌকা যেতে চাচ্ছে না। আমি ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায়নি।

ভাড়া এমন বাড়িয়ে দেয়া প্রসঙ্গে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকার চালক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা মালিকের নির্দেশমতো কাজ করছি। মালিক এমন ভাড়া নিতে বলেছেন।

কেবল এই এলাকাই নয়, বন্যাদুর্গত পুরো সিলেটেই নৌকার জন্য হাহাকার দেখা গেছে। নৌকার অভাবে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও আসতে পারছেন না; জলমগ্ন ঘরেই আটকে আছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বাসিন্দা

তরুণ কন্ঠশিল্পী তাসরীফ হোসাইনের ভেরিফাইড পেইজে পোস্ট করে লিখেছেন, আজ সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ গিয়েছিলাম একজন অন্তসত্বা মহিলাকে উদ্ধার করার জন্যে। জানেন? এখানে কোন কোন নৌকা এক ঘন্টার জন্যে ৫০ হাজার টাকা চাইছে। ওরাই বা কি করবে ওদের ত সব গেছে।

যাবার পথে দেখলাম সেনাবাহিনীও নৌকার খোঁজ করছে ঘাটে বসে। হেল্প চাইলাম, উনারাও নিরুপায়। অনেক কষ্টে একজন মাঝির হাতে পায়ে ধরে রোগির কথা বলিয়ে রাজি করালাম। তবে মাঝি আস্তে আস্তে বলছিল “আমার ঘরের লোক গলা পানিতে ভাসতাসে আমি জাইতাম না।

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *