সাতক্ষীরা পৌরসভার ১১ কাউন্সিলরের করা ১০টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় মেয়র তাজকিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১০টি অভিযোগের মধ্যে পানির বিল, পৌরকর, ট্রেড লাইসেন্স ফি এবং পৌরসভার হাট বাজার ইজারা বাবদ ভ্যাট ও আয়কর সংক্রান্ত অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া বাকী ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্তকালে প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। ১৫ জুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই নির্দেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। ২০১৬ এর মার্চ থেকে ২০২১ এর জুন পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগও আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয় আটান্ন লক্ষ উনিশ হাজার সাতশ এক টাকা পানির বিল মওকুফ, পৌরসভার হাট ইজারা বাবদ ছিছট্টি লক্ষ উনচল্লিশ হাজার পাঁচশত একান্ন টাকা বকেয়া রাখা, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ছত্রিশ লক্ষ সত্তর হাজার নয়শ সত্তর টাকা আদায় করে সরকারি খাতে জমা না করা, এক কোটি ছাব্বিশ লক্ষ বাইশ হাজার নয়শত তেতাল্লিশ টাকার পৌরকর মওকুফ, চৌদ্দ লক্ষ তের হাজার সাতশত ছাব্বিশ টাকা ট্রেড লাইসেন্স ফি মওকুফ, ইজারালব্ধ অর্থ নীতিমালা অনুযায়ী বন্টন না করার অভিযোগ সমূহ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় তাসকিন আহমেদ চিশতীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো: তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান বিধি বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করে মার্চ ২০১৬ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত সময়ে ৫৮ লক্ষ ১৯ হাজার ৭০১ টাকা পানির বিল মওকুফসহ বিল যথাযথভাবে আদায় না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়র কর্তৃক এককভাবে মওকুফ করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া, ১৪২৩-১৪২৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ৬ বছরে সাতক্ষীরা পৌরসভার হাট-বাজার ইজারা বাবদ ৬৬ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৫১ টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া ভ্যাট, আয়কর বাবদ ৩৬ লক্ষ ৭০ হাজার ৯৭০ টাকা আদায় ও সরকারি খাতে জমা করা হয়নি এবং উক্ত সময়ের ইজারা লব্ধ অর্থ হাট-বাজার ইজারা নীতিমালা-২০১১ অনুযায়ী বন্টন না করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আবার, বিদ্যমান বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করে মার্চ ২০১৬ হতে তদন্তকালীন সময় পর্যন্ত মোট এক কোটি ২৬ লক্ষ ২২ হাজার ৯৪৩ টাকার পৌরকর মওকুফ করা হয়েছে।
উক্ত পৌরকর যথাযথভাবে আদায় না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়র কর্তৃক এককভাবে মওকুফ করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। বিদ্যমান নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ না করে মার্চ ২০১৬ হতে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ে ১৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৭২৬ টাকা ট্রেড লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স ফি যথাযথভাবে আদায় না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়র কর্তৃক এককভাবে মওকুফ করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩১(১) মোতাবেক, যেক্ষেত্রে কোন পৌরসভার মেয়র অথবা কোন কাউন্সিলর অপসারণের কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছে অথবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় মেয়র অথবা কাউন্সিলর কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থী অথবা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন না হলে, সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র অথবা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।
সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো: তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে উল্লিখিত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২ এর উপ-ধারা (১)(ঘ) মোতাবেক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে একই আইনের ধারা ৩১(১) অনুযায়ী মো: তাজকিন আহমেদকে সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ জনস্বার্থে জারী করা হলো এবং এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো: তাজকিন আহমেদ (সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত) এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১৫ জুন ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দুদকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো: তাজকিন আহমেদ (সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত) এর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের ক্রমিক-১, ২, ৪ ও ৫ এর অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে মেয়র তাজকিন আহমেদ বরখাস্ত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসান।
ডব্লিউজি/এএইচ